Logo
Logo
×

জলবায়ু

কপ-২৯

দক্ষিণ এশিয়া-আফ্রিকা জলবায়ু কার্যক্রমে অংশীদারিত্ব

Icon

রাওমান স্মিতা

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৭ পিএম

দক্ষিণ এশিয়া-আফ্রিকা জলবায়ু কার্যক্রমে অংশীদারিত্ব

রাওমান স্মিতা। ছবি: সংগৃহীত

কপ-২৯ -এ নাইজেরিয়া প্যাভিলিয়নের আলোচনায় দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অভিন্ন দুর্বলতাগুলো স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। ভূগোলগতভাবে দূরবর্তী হলেও, উভয় অঞ্চলই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, দীর্ঘস্থায়ী খরা এবং সম্পদের অভাবের মতো সাধারণ সমস্যায় জর্জরিত। তবে, এই চ্যালেঞ্জগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্ভাবনী, স্থানীয় ও টেকসই সমাধান তৈরির সুযোগও তৈরি করে।  

প্যাভিলিয়নে আমার মূল বক্তব্যে, আমি জলবায়ু কার্যক্রমে কার্যকর পরিবর্তন আনতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ তুলে ধরেছিলাম- সমতার ভিত্তিতে জলবায়ু অর্থায়ন, সহযোগিতামূলক গবেষণা এবং জলবায়ু ন্যায়বিচার। এই স্তম্ভগুলো শুধুমাত্র তাত্ত্বিক সমাধান নয়; বরং এগুলো এমন কার্যকর পথ যা দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকাকে একত্রিতভাবে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে।  

জলবায়ু অর্থায়নে ব্যবধান পূরণ

 গ্লোবাল জলবায়ু কার্যক্রমে সবচেয়ে বড় ঘাটতিগুলোর একটি হলো পর্যাপ্ত ও ন্যায়সঙ্গত অর্থায়নে প্রবেশাধিকারের অভাব। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিযোজন ও প্রশমন উদ্যোগের জন্য প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও প্রকৃত অর্থে এই তহবিল খুব কমই তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছায়, যেখানে তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার জনগোষ্ঠীকে ন্যূনতম সম্পদে ক্রমবর্ধমান খারাপ অবস্থার সাথে মানিয়ে নিতে হয়।  

আমার বক্তব্যে আমি এই ব্যবধান পূরণের জন্য উদ্ভাবনী আর্থিক সমাধানের উপর গুরুত্ব দিয়েছিলাম। উদাহরণস্বরূপ, ইকোক্যাশ গ্লোবাল ট্রেড হাব, যা আমরা বাংলাদেশ থেকে উদ্যোগ নিয়েছি, এটি সবুজ উদ্যোক্তা এবং স্থানীয় উদ্ভাবকদের সম্পদ, অর্থায়ন এবং বাজারে সংযোগ স্থাপন করতে সহায়তা করে। এই উদ্যোগটি  দেখায় যে কিভাবে আর্থিক ব্যবস্থাগুলোকে নতুনভাবে গঠন করে দুর্বল জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যায়।  

সহযোগিতামূলক গবেষণার শক্তি

দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার রয়েছে বৈচিত্র্যময় পরিবেশব্যবস্থা, অনন্য সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট এবং পরিবেশগত অভিযোজনে দীর্ঘ ইতিহাস। এই অঞ্চলের মধ্যে সহযোগিতামূলক গবেষণা উদ্ভাবনী, অঞ্চল-ভিত্তিক জলবায়ু সমাধান তৈরির সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারে।  

আলোচনায় আমি আধুনিক বিজ্ঞান ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান একত্রিত করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছি। উভয় অঞ্চলের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর রয়েছে শতাব্দীর পর শতাব্দীর অভিজ্ঞতা প্রাকৃতিক সম্পদ পরিচালনা এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে এই জ্ঞান একত্রিত হলে রূপান্তরমূলক ফলাফল পাওয়া সম্ভব। যৌথ গবেষণা কার্যক্রম ও তথ্য ভাগাভাগি ব্যবস্থা উভয় অঞ্চলের জলবায়ু চ্যালেঞ্জের প্রতি কার্যকর প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করবে।  

জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ

জলবায়ু কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের বিষয়টি অগ্রাধিকার পায়। দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার কার্বন নিঃসরণ কম হলেও, তারা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে কঠোর প্রভাবের সম্মুখীন। এই বৈষম্য দূর করা অত্যাবশ্যক।  

প্যাভিলিয়নে আমি ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ (Loss and Damage) প্রক্রিয়াগুলোর প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছি, যা জলবায়ু-সম্পর্কিত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীগুলোকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন। বিশেষ করে, নারীদের, যুবসমাজের এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে, কারণ তাদের অভিজ্ঞতা এবং ধারণাগুলো নীতিমালা তৈরিতে অপরিহার্য।  

দক্ষিণ এশিয়া-আফ্রিকা জোটের আহ্বান

নাইজেরিয়া প্যাভিলিয়নে আমার আলোচনাগুলো দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার মধ্যে একটি জোট গঠনের সম্ভাবনাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। সম্পদ ভাগাভাগি, দক্ষতার বিনিময় এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে যৌথভাবে প্রচারণার মাধ্যমে এই অংশীদারিত্ব অর্থবহ পরিবর্তন আনতে পারে।  

এই জোটটি জলবায়ু-প্রতিরোধী অবকাঠামো, টেকসই জ্বালানি সমাধান এবং উদ্ভাবনী কৃষি পদ্ধতির উপর ফোকাস করে উভয় অঞ্চলের জীবিকা নিশ্চিত করতে পারবে।  

দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। চ্যালেঞ্জ যত বড়ই হোক না কেন, পারস্পরিক সহযোগিতা ও নেতৃত্বের সম্ভাবনা ততটাই বিশাল।  

শেষ বক্তব্যে আমি আহ্বান জানাই, "দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকা কেবল জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার নয়; তারা পরিবর্তনের শক্তিশালী এজেন্ট। আমাদের অঞ্চল এবং পুরো বিশ্বের জন্য একত্রে আমরা এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়তে পারি যা ন্যায়সঙ্গত, টেকসই এবং প্রতিরোধী।"

  • জলবায়ু অর্থায়ন ও ন্যায়বিচার বিশেষজ্ঞ

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন