মানিকগঞ্জে আলোকদিয়া চরে অবাধ বালু উত্তোলন, ফসলি জমি ও স্থাপনা হুমকির মুখে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১৮ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীর আলোকদিয়া চরে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন চলছে। চারটি ড্রেজার ও দুটি শ্যালো মেশিন দিয়ে প্রতিদিন এই কাজ হচ্ছে।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে আলোকদিয়া চরের নদীতীরবর্তী বাড়িঘর ও ফসলি জমি ধ্বংসের মুখে পড়েছে। এই ভাঙনের ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে মুজিব কেল্লা, বেশ কয়েকটি স্কুল, মসজিদ এবং হাট-বাজারের স্থাপনা।
এইভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য নৌপরিবহন উপদেষ্টা ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিবালয়ের দক্ষিণ তেওতা এলাকায় সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া বালুমহাল থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে যমুনা নদীর পশ্চিম পাশে রয়েছে বালু উত্তোলনের ছয়টি মেশিন এবং বেশ কয়েকটি বাল্কহেড। বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) বিদ্যুতের পিলারের পাশে ছয়টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেডে ভরা হচ্ছে এবং এসব বালু অন্যান্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
ইজারা দেওয়া নির্ধারিত স্থানের বাইরে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড়ে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ভাঙনে নদীতে চলে গেছে একটি মসজিদ, বহু কৃষিজমি ও বসতবাড়ি। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদ এবং সরকারিভাবে নির্মিত মুজিব কেল্লা। এই ঝুঁকির মধ্যে অনেক পরিবার ঘরের চাল, বেড়া এবং আসবাবপত্র নৌকায় করে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
ছলিম উদ্দিন নামের একজন বাসিন্দা বলেন, শীতকালে সাধারণত নদী ভাঙন কম থাকে। কিন্তু ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর পাড় ভাঙছে। অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে ভাঙন তীব্র হয়েছে, ফলে কয়েকটি পরিবার মিলে অন্যত্র সরে যাচ্ছেন।
শিবালয়ের আলোকদিয়া চরের বাসিন্দারা জানান, বিদ্যুতের পিলারের পাশ থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কেউ বাধা দিতে গেলে মারধর ও মামলা করার হুমকি দেওয়া হয়, তাই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না।
আলোকদিয়া চরের বাসিন্দা জামাল হোসেন বলেন, অসাধু বালু ব্যবসায়ীদের নিষেধ করেও বালু উত্তোলন বন্ধ করা যায়নি। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন। কিন্তু অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রশাসন।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন জানান, যমুনায় ইজারা দেওয়া এলাকার বাইরে বালু উত্তোলনের কারণে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং দুটি ড্রেজার মেশিন ব্যবহার অনুপযোগী করা হয়েছে। এরপরও যদি বৈদ্যুতিক খুঁটির কাছে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকে, আবারও অভিযান চালানো হবে। তবে, মূলহোতাদের ধরার চেষ্টা চলছে।
জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা জানান, চর এলাকার মানুষের একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘরবাড়ি রক্ষায় অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে দ্রুতই প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ইজারাদারদের ইজারা বাতিল করা হবে।