বীজ-সার-শ্রমিকের মূল্য বাড়ায় বোরো চাষে চ্যালেঞ্জ
মেহেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪০ এএম
ছবি : সংগৃহীত
মেহেরপুরের তিন উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ১৯,৪২৭ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জেলার ৯৭৮ হেক্টর জমিতে বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশার মধ্যেও কৃষকরা ইরি-বোরো চাষে মনোনিবেশ করেছেন। ১৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম চলবে আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত। কৃষকরা ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঠান্ডা পানিতে নেমে বীজ উত্তোলন ও জমি প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এছাড়া আগাম আলু উত্তোলনের পর ফাঁকা জমিতে ইরি-বোরো ধানের চারা রোপণ করা হচ্ছে। এতে গ্রামবাংলার কৃষি জীবনে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছেন।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এ বছর হাইব্রিড ও উপশী জাতের ধান চাষে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ব্রি-২৮, ব্রি-৬৩, ৫০, ৫৮, ৭৪, ৮৯ সহ স্থানীয় জাতের ধান চাষ করা হচ্ছে। হাইব্রিড ও উপশী জাতের ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯,৩২৭ হেক্টর জমিতে।
কৃষকদের মতে, বীজ, সার এবং শ্রমিকের মূল্যবৃদ্ধি চাষাবাদে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। শুকুরকান্দি গ্রামের আমির হামজা জানান, খুচরা সারের দোকানগুলোতে চাহিদার চেয়ে বেশি দাম দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে। এছাড়া কীটনাশকের দামও লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গাংনীর মাইলমারী গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম না দিলে সার পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনের নিয়মিত মনিটরিং নিশ্চিত করার দাবি জানান।
গাংনী উপজেলা বিসিআইসি সার বীজ ডিলার মেসার্স শওকত ট্রেডার্সের মালিক আওকাত হোসেন অবশ্য দাবি করেছেন যে, সারের কোনো সংকট নেই। তিনি জানান, অতিরিক্ত তামাক চাষের কারণে ডিএপি সারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর তামাক চাষ দ্বিগুণ হয়েছে, যার ফলে কৃষকরা অতিরিক্ত সার ব্যবহার করছেন।
জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, মেহেরপুর কৃষি উৎপাদনে সমৃদ্ধ একটি জেলা। এখানে গম, ভুট্টা, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন ও সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদিত হয়। অন্যান্য জেলার তুলনায় এখানে বোরো ধানের আবাদ এক মাস পিছিয়ে শুরু হয়, তবে ইতোমধ্যে ১৫০০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আবহাওয়া ও বীজ ভালো থাকায় এবার কৃষকরা লাভবান হবেন। কৃষি উপকরণের প্রাপ্যতা নিশ্চিত রাখতে কাজ চলছে। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ মৌসুমে বাম্পার ফলন অর্জিত হবে।
সরকারি সহায়তা ও সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হলে মেহেরপুরের কৃষকরা এবারও বাম্পার ফলনের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করবেন বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।