কুমিল্লায় হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনায় সেনাক্যাম্প কমান্ডার প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২৭ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
কুমিল্লায় যৌথবাহিনীর হাতে আটক হয়ে হেফাজতে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয় সেনা ক্যাম্পের কমান্ডারকে প্রত্যাহার করে 'উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি' গঠনের কথা জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। সংস্থাটি জানিয়েছে, তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে সেনা আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এ ঘটনার জরুরি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। নিহত ব্যক্তির নাম তৌহিদুল ইসলাম, যদিও আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে তার নাম তৌহিদুর রহমান উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারের বিবৃতিতেও তার নাম তৌহিদুল ইসলাম বলা হয়েছে।
নিহত তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ। যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে কুমিল্লায় তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে 'ঘটনার জন্য দায়ীদের' সেনা আইনে বিচারের অঙ্গীকার করা হয়েছে।
এদিকে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক হয়ে মৃত্যু হওয়ায় স্থানীয়রা শনিবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। সামাজিক মাধ্যমেও এ ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে একে 'বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড' উল্লেখ করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন। নিহত তৌহিদুর রহমানের পোস্ট মর্টেম শেষ হয়েছে এবং শনিবার বিকেলেই তার জানাজা ও দাফন হওয়ার কথা রয়েছে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন জানিয়েছেন, তৌহিদুল ইসলামকে শুক্রবার অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। যৌথ বাহিনী থানা পুলিশকে জানানো পর পুলিশ তাকে গ্রহণ করার সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম জানান, তৌহিদুল ইসলামকে গ্রহণ করার সময় তার জ্ঞান ছিল কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান হারান। দ্রুত তাকে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে তিনি মারা যান।
তার বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ জানান, হাসপাতালের তার ভাইয়ের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল স্পষ্ট। তার দাবি, তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে এবং মৃতপ্রায় অবস্থায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তিনি আরও জানান, তৌহিদুল ইসলামকে আটক করার সময় সেনাসদস্যরা বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি করেন।
শুক্রবার যৌথ বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয় এবং সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। স্থানীয়রা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী মানববন্ধনে অংশ নেয়।
আইএসপিআর জানিয়েছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যৌথবাহিনীর অভিযানে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলা থেকে আটক তৌহিদুর রহমান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। একটি উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের সেনা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের মতে, ইটাল্লা এলাকায় তাদের পৈত্রিক সম্পদ নিয়ে বিরোধ চলছিল এবং বুধবার তৌহিদুল ইসলাম সেখানে গিয়েছিলেন। একটি পক্ষ সেনাক্যাম্পে অভিযোগ করার পর যৌথবাহিনী অভিযান চালায় এবং তাকে আটক করে। সেই সময় নির্যাতনের কারণেই তিনি প্রাণ হারান।
তৌহিদুল ইসলামের ভাই আবুল কালাম আজাদ জানান, সেনাসদস্যরা তাদের ঘর তল্লাশির সময় অস্ত্র খুঁজছিল। তাদের সঙ্গে চারজন সিভিল লোক ছিল। এক পর্যায়ে তার ভাইকে নিয়ে যায়। সেনাবাহিনীর বাইরে বেসামরিক যারা জড়িত, তাদেরও খুঁজে বের করতে হবে।