ফেনীর মুহুরী সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ

ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
ফেনীর মুহুরী সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পে অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি। ৫৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্প কৃষকদের কাজে আসছে না, বরং অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৫৬২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অর্থায়ন করলেও কৃষকরা এর সুফল পাচ্ছেন না।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, যা ২০২৪ সালের জুনে শেষ হয়। ৫৩৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের মধ্যে ৮৫০টি স্কিমের মধ্যে হস্তান্তর হয়েছে ৩৩৭টি, তবে চালু হয়েছে মাত্র ২৬৮টি।
প্রকল্পের বিভিন্ন অনিয়মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য :
নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার (দ্বিতীয়-তৃতীয় গ্রেডের ইট, নিম্নমানের কংক্রিট ও স্ক্র্যাপ রড)।
স্কিম নির্মাণে পাইপের দৈর্ঘ্য কম দেখিয়ে বাড়তি বিল উত্তোলন।
বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার ও মিটার চুরির অভিযোগ।
বন্যার ক্ষতিকে দুর্নীতির আড়াল হিসেবে ব্যবহার করা।
জার্মান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লুটপাট
জার্মানির ‘লুডভিগ ফাইফার হোচ-উন্ড টিফবাউ জিএমবিএইচ অ্যান্ড কোম্পানি কেজি’ ১৫৭ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকার কাজ পায়, যার মধ্যে ১৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি গায়েব হয়ে গেছে। সরকারের কাছে তাদের পাওনা ২৩ কোটি টাকা থাকলেও, প্রকল্পে কাজের গুণগতমান অত্যন্ত নিম্নমানের হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ :
পানির অভাবে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
পূর্বের তেলের পাম্পের তুলনায় নতুন প্রিপেইড মিটার ব্যবস্থা ব্যয়বহুল।
বন্যার অজুহাতে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে।
নিম্নমানের পাইপ ব্যবহারের কারণে ভূগর্ভস্থ লাইন ভেঙে যাচ্ছে।
প্রকল্পের অনিয়ম তদন্তে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে আছেন যুগ্ম সচিব মাহফুজা আক্তার। এ কমিটির সদস্যরা প্রকল্পের আর্থিক ও কারিগরি দিক খতিয়ে দেখছেন।
মুহুরী সেচ প্রকল্পে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার ফলে কৃষকেরা প্রকৃত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর তদন্ত ও প্রয়োজনীয় সংস্কার না হলে কৃষি উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।