ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে নিহত ২৩, পরিচয় মিলেছে ১০ বাংলাদেশির

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৬ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে নিহত ২৩ জনের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে মামা-ভাগ্নেসহ তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এ ঘটনায় জড়িত দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
পুলিশ জানিয়েছে, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং নিহতদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সুন্ধিকুড়ি গ্রামের সাগর বিশ্বাস, আশীষ কীর্তনীয়া, সাগর বাড়ৈ, শাখারপাড়ের সজীব মোল্লা, সাদবাড়িয়ার রাজীব হোসেন, বৌলগ্রামের অনুপ সরকার ও নৃপেন কীর্তনীয়া, গোবিন্দপুর গ্রামের ইনসান শেখ ও আবুল বাশার, এবং পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের টিটু হাওলদার।
নিহতদের স্বজনরা জানান, দালালদের খপ্পরে পড়ে গত জানুয়ারি মাসের শুরুতে তারা ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের হাসান মাতুব্বর ও কুলসুম বেগমের ছেলে টিটু হাওলাদার পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি পাড়ি জমাতে গিয়ে নৌকাডুবিতে মারা যান। মোবাইলে ছেলের মৃত্যুর ছবি দেখে শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি।
নিহত টিটু হাওলাদারের মা কুলসুম বেগম বলেন, "আমি আমার বাবাকে চাই। আমার এই একটাই সন্তান। আমি অনেক কষ্ট করে আমার সন্তানকে বড় করেছি। আমি রফিক দালালকে ১৬ লাখ টাকা দিয়েছি। সে বলেছে, আমার ছেলেকে সুন্দরভাবে পাঠাবে।"
টিটুর বাবা হাসান হাওলাদার বলেন, "আমি অনেক কষ্ট করে আমার ছেলেকে বড় করেছি। অনেক ধার-দেনা করে পাঠিয়েছি। এখন আমি কীভাবে ধার-দেনা শোধ করব। আমার ছেলে তো নেই। গতকাল দালাল আমার ছেলের লাশের ছবি পাঠিয়েছে। আমি এখন কী করব।"
টিটু হাওলাদারের মামা আবুল বাশার আকনের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। আবুল বাশার আকনের বড় ভাই বাচ্চু আকন বলেন, "আমি আমার ভাই ও ভাগিনাকে হারিয়ে ফেলেছি। আমার ভাইয়ের জন্য দুই বারে দুই দালালকে ২৮ লাখ টাকা দিয়েছি। জমিজমা বিক্রি করেছি। ধার দেনা করেছি। এখন আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। সরকারের কাছে দাবি করছি, টাকা পয়সা সবই তো গেছে। এখন আমার ভাইয়ের লাশটা যদি সরকার ফিরিয়ে দেয়। আর ভাগিনা টিটুর লাশটাও সরকারের কাছে ফেরত চাই। আর এ ঘটনায় জড়িত দালালদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।"
শুধু টিটু হাওলাদারের পরিবারই নয়, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১০ যুবকের নৌকাডুবিতে মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম।
রাজৈর থানার ওসি মো. মাসুদ হোসেন খান বলেন, "আমরা ইতোমধ্যে শুনেছি লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নিহত ২৩ বাংলাদেশির মধ্যে ১০ জনই মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাসিন্দা। আমরা নিহতদের তালিকা তৈরি করে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবো। যাতে লাশগুলো দেশে স্বজনদের কাছে ফেরত আসে সেই উদ্যোগ গ্রহণ করবো।"
ওসি আরও বলেন, "এ ঘটনায় রাজৈর হরিদাসদি গ্রামের স্বপন মাতুব্বর, মজুমদারকান্দি গ্রামের মনির হাওলাদার ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলীপুরের রফিকুল ইসলাম দালাল জড়িত থাকার কথা মৌখিকভাবে শুনেছি। ঘটনার পর থেকে দেশে থাকা দালালরা আত্মগোপনে রয়েছেন। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।"