বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালে সংকটের শেষ নেই

বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০২ এএম

বাগেরহাটের ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল। ছবি : সংগৃহীত
বাগেরহাটের ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল কেবল নামেই ২৫০ শয্যার, বাস্তবে এটি পরিচালিত হচ্ছে ১০০ শয্যার জনবল ও বরাদ্দ দিয়ে। ফলে চিকিৎসাসেবা ব্যাপক সংকটে পড়েছে, যা সরেজমিনে হাসপাতাল পরিদর্শনে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
হাসপাতালে মোট ৫৮টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ৩৩টি শূন্য, যার ফলে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ সম্পূর্ণরূপে সেবা দিতে পারছে না। উদাহরণস্বরূপ, হৃদরোগ, চক্ষু ও নাক-কান-গলা বিভাগের সেবা বর্তমানে বন্ধ। অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগেও ৬ জন থাকার কথা থাকলেও মাত্র ১ জন চিকিৎসক দিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, যা সার্বিক চিকিৎসাসেবাকে ব্যাহত করছে। এছাড়া, হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগ চালু হলেও মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি।
২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও প্রতিদিন গড়ে ৪০০ জন রোগী এখানে ভর্তি থাকছেন। ফলে প্রচণ্ড শয্যা সংকট তৈরি হয়েছে। রোগীদের শুয়ে থাকার জন্য বারান্দা, ওয়ার্ডের ফাঁকা জায়গা, এমনকি সিঁড়ির পাশেও বিছানা পাততে হচ্ছে। সেবিকারা একেকজন দিনে প্রায় ৪০-৪৫ জন রোগীর সেবা দিচ্ছেন, যা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। অপর্যাপ্ত জনবল ও পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় রোগীদের চিকিৎসা সঠিকভাবে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
হাসপাতালের দৈনিক বরাদ্দ ২৫০ শয্যার জন্য নির্ধারিত থাকায় অতিরিক্ত রোগীদের জন্য খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫০ রোগী হাসপাতালে খাবার পাচ্ছেন না। অনেকে চার-পাঁচ দিন ধরে ভর্তি থাকলেও একবারের জন্যও হাসপাতালের খাবার পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।
সাধারণ রোগীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবা হাসপাতালেই দেওয়ার কথা থাকলেও, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের বাধ্য হয়ে বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে দরিদ্র রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমদ্দার জানিয়েছেন, ১০০ শয্যার জনবল দিয়েই ২৫০ শয্যার চিকিৎসাসেবা চালাতে হচ্ছে। ফলে রোগীদের প্রত্যাশিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, যথাযথ জনবল ও বরাদ্দ নিশ্চিত করা গেলে, রোগীদের সঠিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
বাগেরহাট জেলা হাসপাতালটি জেলার ১৭ লাখ মানুষের একমাত্র সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, জনবল, ও বরাদ্দ না থাকায় এটি কার্যত সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে রোগীদের দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে। জনসাধারণের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।