Logo
Logo
×

সারাদেশ

থেমে নেই মানবিক ডিসি জাহিদুল ইসলামের মানবিক কাজ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩১ পিএম

থেমে নেই মানবিক ডিসি জাহিদুল ইসলামের মানবিক কাজ

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার মানবিক কার্যক্রম থেমে নেই।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার মানবিক কার্যক্রম থেমে নেই। অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বারবার মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। এবার তার সাহায্যে আশার আলো দেখতে পেলেন দুই হাত হারানো এক যুবক, আব্দুর রহিম।

সোমবার (৩ মার্চ) দুপুর ১২টা ৩২ মিনিট। নারায়ণগঞ্জে মাসব্যাপী গাছ সুরক্ষা (গাছ থেকে পেরেক অপসারণ) কর্মসূচির উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন) মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারি, ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদা রোকসানা সুলতানা, সহকারী বন কর্মকর্তা মাহিনুর রহমান ও জান্নাতুল ফেরদৌসসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা।

উদ্বোধনী কার্যক্রমের ঠিক আগ মুহূর্তে এক অপরিচ্ছন্ন পোশাক পরা যুবক এগিয়ে আসেন ডিসির দিকে। নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দিতে গেলে ডিসি দূর থেকেই খেয়াল করেন, যুবকটির দুই হাত নেই। তিনি নিজেই এগিয়ে গিয়ে যুবককে সালাম জানান এবং জানতে চান, কিভাবে তাকে সহায়তা করা যায়। ডিসির এমন মানবিক আচরণে অবাক হয়ে যান উপস্থিত সবাই।

জেলা প্রশাসকের কাছে নিজের দুর্দশার কথা সংক্ষেপে জানান যুবক আব্দুর রহিম (২২)। ডিসি তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় সংগ্রহের নির্দেশ দেন এবং স্থানীয়ভাবে যাচাই-বাছাই করতে বলেন।

জানা যায়, রহিম ফতুল্লার উত্তর নরসিংপুর এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা আজিজুল বেপরী মারা গেছেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে পরিবারের অভাব দূর করতে স্থানীয় একটি হোসিয়ারি কারখানায় কাজ শুরু করেন রহিম। কিন্তু কাজে যোগদানের দুই ঘণ্টার মধ্যেই হাই-ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়ে মারাত্মকভাবে অগ্নিদগ্ধ হন। জীবন রক্ষায় চিকিৎসকরা বাধ্য হয়ে তার দুটি হাতই কেটে ফেলেন।

পরিবারের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকা রহিমকে বিয়ে করিয়ে দেন তার মা। তার স্ত্রী পপি আক্তার ও তিন বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। দুই হাত না থাকায় সাহায্যের উপরই নির্ভর করে চলে তাদের জীবনযাপন।

রোজার শুরুতে সংসারে চরম অভাব দেখা দেয়। কয়েক মাসের বাসা ভাড়া বকেয়া থাকায় বাড়িওয়ালা বাসা ছাড়ার আল্টিমেটাম দেন। এমন সংকটে পড়ে বাধ্য হয়েই জেলা প্রশাসকের কাছে সাহায্য চান রহিম।

রহিমের দুর্দশার কথা শুনে জেলা প্রশাসক পরের দিন (মঙ্গলবার) তাকে অফিসে ডেকে নেন। সেখান থেকে সরকারি তহবিল থেকে ১০ হাজার টাকার চেক এবং ব্যাক্তিগতভাবে তার সন্তানকে ঈদের পোশাক কেনার জন্য নগদ ২ হাজার টাকা দেন।

চেক গ্রহণের সময় আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়েন রহিম। তিনি বলেন, "স্যার, আমি সাহায্য নিয়ে বাঁচতে চাই না। যদি কেউ আমাকে ছোট একটা দোকান করে দিতো, তাহলে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সন্তানকে পড়াশোনা করানোর স্বপ্ন পূরণ করতে পারতাম।"

জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম জানান, সরকারি তহবিলের সীমাবদ্ধতার কারণে তিনি চাইলেও বড় অঙ্কের অর্থ সহায়তা দিতে পারেননি। তবে রহিমকে স্বাবলম্বী করতে কীভাবে আর্থিকভাবে পুনর্বাসন করা যায়, সে বিষয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

"আমার লক্ষ্য হলো, যুবকটি যেন ভবিষ্যতে কারও সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল না থাকে এবং নিজের পরিবারকে স্বাভাবিকভাবে চালাতে পারে,"— বলেন মানবিক এই জেলা প্রশাসক।

মানবিকতার এই উদ্যোগ রহিমের মতো আরও অসহায় মানুষের জন্য আশার আলো হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
Email: [email protected]

অনুসরণ করুন