অবশেষে স্বপ্নপূরণ, আকাশে উড়ল জুলহাসের তৈরি বিমান

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১০:৪২ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
"ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়"—এই প্রবাদটিকে বাস্তবে রূপ দিলেন মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার উদ্ভাবক জুলহাস মোল্লা। চার বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর তিনি নিজেই তৈরি করলেন বিমান, আর সেটিতে নিজেই পাইলট হয়ে আকাশে ওড়ার স্বপ্নও পূরণ করলেন।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লার উপস্থিতিতে শিবালয়ের যমুনা নদীর চরে সফলভাবে বিমান উড্ডয়ন করেন জুলহাস। এ সময় তিনি তিন দফায় প্রায় তিন মিনিটের জন্য আকাশে উড়তে সক্ষম হন।
জুলহাসের শিকড় মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া গ্রামে হলেও নদীভাঙনের কারণে বর্তমানে তিনি শিবালয়ের ষাইটগর তেওতায় পরিবারসহ বসবাস করছেন। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে পঞ্চম জুলহাস ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন।
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়নি। দৌলতপুরের জিয়নপুর এলাকার বি.কে.এস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাসের পর জীবিকার তাগিদে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। তবে এই পেশা তাকে তার স্বপ্ন থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারেনি।
জুলহাস জানান, ছোটখাটো রিমোট কন্ট্রোল বিমান বানিয়ে ওড়ানোর পর থেকেই তিনি নিজের তৈরি বিমানে আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতেন। এই লক্ষ্যেই তিনি তিন বছর গবেষণা করেন এবং এক বছরে বিমান তৈরির কাজ সম্পন্ন করেন।
নিজের তৈরি বিমানে উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, "আজকের দিনটি আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। আমার দীর্ঘ পরিশ্রমের ফল পেয়েছি। আমি নিজেই আমার বিমানের পাইলট হয়ে আকাশে উড়েছি।"
জুলহাসের তৈরি এই বিমানটি তৈরি করতে প্রায় ৭-৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। বিমানে সেভেন হর্স পাওয়ারের একটি মোটর পাম্প এবং নিজস্বভাবে তৈরি করা পাখা ব্যবহার করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ বিভিন্ন সময় কেনা হয়েছে, যা ধাপে ধাপে বিমান নির্মাণে কাজে লেগেছে।
জুলহাসের বাবা জলিল মোল্লা জানান, "ছোটবেলা থেকেই ও নতুন কিছু বানানোর চেষ্টা করত। আজকে ওর স্বপ্ন বাস্তব হয়েছে, এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।"
জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, "জুলহাসের উদ্ভাবনী চিন্তা ও পরিশ্রম সত্যিই প্রশংসনীয়। তার গবেষণার জন্য সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে এবং প্রাথমিকভাবে আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে তাকে উৎসাহিত করা হয়েছে।"
বিমান ওড়ানোর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলেও জুলহাস এখানেই থামতে চান না। তার লক্ষ্য আরো উন্নত প্রযুক্তির বিমান তৈরি করা এবং ভবিষ্যতে দেশকে কিছু উপহার দেওয়া। সরকারি সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো একদিন এই তরুণ উদ্ভাবক দেশের বিমান শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবেন।