ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আর্থিক বিবরণী বা বার্ষিক প্রতিবেদন অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ।
বুধবার (২৮ আগস্ট) পরিচালনা পর্ষদের ৪৩৬তম (২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়) সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্য পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার নিট মুনাফাসহ বিগত অর্থবছরের প্রতিবেদন পাস হয়।
তথ্যমতে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে। পরিচালন ব্যয় বাদে নিট মুনাফা হয়েছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক সবচেয়ে বেশি আয় করেছে রেপো, স্পেশাল রেপোর বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংককে দেওয়া স্বল্পমেয়াদি ধারের মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৩২ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে। যা আগের সাত বছরে দেওয়া মোট ধারের পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে।
আর্থিক হিসাব বিবরণী অনুসারে, সব ধরনের খরচের পর গত অর্থবছরে নিট আয় থেকে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে সরকারি কোষাগারে। তার আগের অর্থবছরের নিট মুনাফা হয় ১০ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট মুনাফা বেড়েছে ৪ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা বা ৪০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ দেখানো হয় ৯৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে দেখানো হয় ৯৭ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংকে ঋণ না বেড়ে উল্টো ৬ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা কমেছে। তবে সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সময়ে তথ্য গোপন করে ৬২ দিনে সরকারকে টাকা ছাপিয়ে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক প্রতিবেদনে দেখাচ্ছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক থেকে নিট ঋণ ছিল ৮২ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি ঋণ সরবরাহ করলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। এমনিতেই এখন ১১ শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতি। এর মধ্যে এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ সরবরাহ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেন অর্থনীতিবিদরা। অবশ্য গত অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে ঋণ সরবরাহ না করারই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকটের কারণে গত অর্থবছরও বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে। আগের অর্থবছর বিক্রি করে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। আবার এ সময়ে টাকার বিপরীতে ডলারের দর অনেক বেড়েছে। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা খাত থেকে ভালো আয় হয়েছে। ডলার বিক্রির কারণে অবশ্য দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপক কমে এখন আইএমএফের বিপিএম-৬ অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। যদিও নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করেছে। সরকারের আমদানি চাহিদা আন্তঃব্যাংক থেকে সংগ্রহ করে দিচ্ছে। একই সঙ্গে নতুন করে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে গতকালের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন গভর্নর, সার্বিক অর্থনীতি এবং গত অর্থবছরের কৃষিঋণ বিতরণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া আর্থিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে আর্থিক স্থিতিশীলতা রিপোর্ট-২০২৩ পর্ষদ সভায় পাস হয়েছে; যা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। এই রিপোর্টে ব্যাংক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।