Logo
Logo
×

অর্থনীতি

সঞ্চয়পত্রের সুদ বাড়ল

Icon

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৯ এএম

সঞ্চয়পত্রের সুদ বাড়ল

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সঞ্চয়কারীদের আকৃষ্ট করতে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় গতকাল এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জানিয়েছে, নতুন সুদহার কার্যকর হবে ১ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে।

সরকারের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি, বৈদেশিক ঋণের সীমিত প্রবাহ, এবং ঋণ পরিশোধের ক্রমবর্ধমান চাপ মেটাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুদহার বৃদ্ধি স্বল্প আয়ের মানুষদের আর্থিক সুরক্ষা দেবে, যাদের প্রকৃত আয় গত দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতির কারণে কমেছে। তবে, পূর্বে কেনা সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে আগের সুদহারই প্রযোজ্য থাকবে।

পরিবর্তিত সুদহার ও তার বিশ্লেষণ

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনে থাকা চারটি সঞ্চয়পত্রের পুরাতন সুদহার ছিল ১১.০৪ শতাংশ থেকে ১১.৭৬ শতাংশ। এখন থেকে, ট্রেজারি বন্ডের গড় সুদহারকে ভিত্তি করে সঞ্চয়পত্রের সুদহার নির্ধারণ করা হবে। প্রতি ছয় মাস অন্তর ট্রেজারি বন্ডের সুদহার পর্যালোচনার মাধ্যমে এই হার সমন্বয় করা হবে।

নতুন প্রজ্ঞাপন অনুসারে :

পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে সুদহার হবে ১২.৪ শতাংশ।

সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের জন্য এই হার সামান্য কমে ১২.৩৭ শতাংশ হবে।

তিন মাস মেয়াদি মুনাফা বহনকারী সঞ্চয়পত্রে সুদহার হবে ১২.২৫ থেকে ১২.৩০ শতাংশ।

পরিবার সঞ্চয়পত্রে নতুন হার ১২.৩৭ শতাংশ, যা পূর্বে সাড়ে ১১ শতাংশ ছিল। পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে সুদহার হবে ১২.৫৫ শতাংশ, যা আগে ছিল সর্বোচ্চ ১১.৭৬ শতাংশ। তবে ওয়েজ আর্নার্স বন্ড এবং অন্যান্য ডলারভিত্তিক বন্ডের সুদহার অপরিবর্তিত থাকবে।

অর্থনৈতিক প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষজ্ঞ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই উদ্যোগ সরকারের ঋণ পরিশোধের ব্যয় বাড়াবে। একইসঙ্গে বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া আরও কঠিন হবে। কারণ, সঞ্চয়কারীরা তাদের অর্থ ব্যাংকের পরিবর্তে সরাসরি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন।

তাছাড়া, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) উচ্চ সুদের হার দিচ্ছিল বলে সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগে মানুষের আগ্রহ কম ছিল। নতুন এই নীতির মাধ্যমে সরকার সঞ্চয়পত্রকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করেছে। একইসঙ্গে এটি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির অংশ হিসেবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে।

সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ ও অর্থ ব্যবস্থাপনা

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে ১৪ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩০.৭৭ শতাংশ কম। তবে, নিট বিক্রি প্রায় ৭৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৮ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা হয়েছে।

অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে দেশের বৈদেশিক আয় ২৭ শতাংশ কমেছে, মাত্র ১.৫৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। ঋণ পরিশোধের ব্যয় বেড়ে হয়েছে ১.৭১ বিলিয়ন ডলার। এসব তথ্য ইঙ্গিত দেয়, সরকারের হাতে তহবিলের সংকট রয়েছে এবং খরচ মেটাতে নগদ অর্থের প্রয়োজনীয়তা তীব্র।

সঞ্চয়পত্রের সুদহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত একদিকে মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য আর্থিক স্বস্তি দেবে, অন্যদিকে সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহে সহায়ক হবে। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট এবং ঋণ প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে এই নীতির ভারসাম্য রক্ষা এবং সমান্তরালে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন