বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে দ্রুত জ্বালানি রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:১৯ পিএম

ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রধান পোশাক আমদানিকারী দেশগুলো টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে এখনই পরিবেশবান্ধব জ্বালানির দিকে ঝুঁকতে হবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দ্রুত জ্বালানি রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। সুইডেন দূতাবাসের সহযোগিতায় ‘ইনস্পায়ার: ইনিশিয়েটিভ টু স্টিমুলেট প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট ফর রিসোর্স এফিশিয়েন্সি’ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ ও কারিগরি সহায়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (সিডা) মহাপরিচালক জ্যাকব গ্রানিট বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য পোশাক খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে ইউরোপের কঠোর পরিবেশগত নীতিমালা মেনে চলতে হলে এই খাতকে অবশ্যই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর করতে হবে। না হলে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে পড়বে।”
সিডার ট্রেড, প্রাইভেট সেক্টর ও ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সট্রুমেন্টস বিভাগের প্রধান কিয়েল ফোর্সবার্গ বলেন, “শুধু সরকারি তহবিল দিয়ে পোশাক খাতের সবুজায়ন সম্ভব নয়। বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং ঝুঁকি কমাতে হবে।”
সুইডেন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন মারিয়া স্ট্রিডসম্যান বলেন, “সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হলো ‘সঞ্চয় করা’ জ্বালানি। পোশাক কারখানাগুলো যদি তাদের জ্বালানি খরচ ১০-২০% কমাতে পারে, তাহলে এটি ব্যয় সাশ্রয় ও পরিবেশের জন্য যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে।”
তিনি আরও জানান, “ইনস্পায়ার প্রকল্প শুধু নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার ঘটাবে না, বরং নারী কর্মীদের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে সহায়তা করবে। ভবিষ্যতে সবুজ প্রযুক্তি গ্রহণকারী কারখানাগুলোর জন্য আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকবে।”
২০২৩ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাত দেশের জিডিপিতে ১০.৩৫% অবদান রেখেছে এবং ৪৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১০.২৭% বেশি। তবে এই খাত উচ্চ জ্বালানি ব্যবহারের পাশাপাশি দেশের মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ১৫.৪%-এর জন্য দায়ী।
‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সবুজায়ন: প্রতিশ্রুতি থেকে তৎপরতা’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মো. আখতার হোসেন অপূর্ব, বিজিএমইএ সাপোর্ট কমিটির সদস্য মো. রেজওয়ান সেলিম, জায়েতুন বিজনেস সলিউশন চেয়ারম্যান মো. আরফান আলী, সোলশেয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনোভেশন ডিরেক্টর সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ এবং কাপ্পাহলের সাসটেইনেবিলিটি ম্যানেজার রাফিয়া সুলতানা। আলোচনায় পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে রূপান্তরের জন্য বাড়তি বিনিয়োগ, অর্থায়ন ও কারিগরি চ্যালেঞ্জগুলো উঠে আসে।
ইনস্পায়ার প্রকল্প মূলত রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত এলাকায় অবস্থিত কারখানাগুলোকে জ্বালানি রূপান্তরের জন্য আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেবে। প্রকল্পের আওতায় কারখানাগুলোকে মোট বিনিয়োগের ৬০-৭০% বহন করতে হবে এবং জুলাই ২০২৫ নাগাদ প্রস্তাব আহ্বান করা হবে।
অনুষ্ঠানে সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হেলাল হোসেন স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশের সিনিয়র ম্যানেজার (পোর্টফোলিও ডেভেলপমেন্ট) মোহাম্মদ সাকিব খালেদ।