
হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে শুরু করেছেন।
কুয়েট প্রশাসনের তথ্যমতে, আজ বুধবার সকাল থেকে সাতটি হলের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। তবে এখনও কিছু শিক্ষার্থী হল না ছাড়লেও, তারা শিগগিরই চলে যাবেন বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুয়েট প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেয়। তবে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে হলে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
কুয়েটের রেজিস্ট্রার মো. আনিচুর রহমান ভূঞা বলেন, "সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের আজ সকাল ১০টার মধ্যে হল ছাড়তে বলা হয়েছিল। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হল ছেড়ে চলে গেছেন। তবে যারা যেতে দেরি করছেন, তাদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
তবে ১১টার দিকে বিভিন্ন হলে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এখনো অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন, উপাচার্যের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তারা হল ছাড়বেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, "আমাদের ওপর যে নৃশংস আক্রমণ হয়েছে, তাতে ভিসির প্রত্যক্ষ ইন্ধন ছিল। তিনি কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না। তাকে পদত্যাগ করতেই হবে।"
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আজহার উদ্দিন বলেন, "হঠাৎ হল ছাড়ার নোটিশ পেয়ে হতবাক হয়েছি। মাসের শেষ, আমার টিউশনির ব্যাপার আছে। সব মিলিয়ে খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি।"
এদিকে, খান জাহান আলী হল, অমর একুশে হল ও লালন শাহ হলে গিয়ে দেখা যায়, কিছু শিক্ষার্থী এখনও হলে অবস্থান করছেন। তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই হল ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কেউ কেউ বলেছেন, প্রশাসনের চাপ এলে হল ছেড়ে ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
প্রসঙ্গত, ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহিরাগতদের সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন শিক্ষার্থীরা প্রথমে পাঁচ দফা এবং পরে উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবন ও একাডেমিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেন। ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে উপাচার্যের বাসভবনেও তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। এরপর আন্দোলনকারীরা ঢাকায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। কিন্তু উপাচার্য পদত্যাগ না করায় শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।