উচ্চশিক্ষার জন্য ফিনল্যান্ডে যেতে যা লাগবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০৩ পিএম
বর্তমানে দেশের অনেকেই উচ্চ শিক্ষার জন্য বেছে নিচ্ছেন ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ ফিনল্যান্ড। দেশটি স্ট্যাডি গ্যাপ থাকলেও ভর্তির সুবিধা দিচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দেশটিতে শিক্ষা শেষে চাকরি ও নাগরিকত্ব পাবার হাতছানি। আর এ কারণেই অনেকই খোঁজ নিচ্ছে এই দেশটিতে অনার্স বা মাস্টার্স কোর্সে ভর্তির জন্য। এ ক্ষেত্রে প্রতারণারও শিকার হচ্ছেন অনেকে। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশি আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকছে এখানে।
ফিনল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন প্রক্রিয়া, যোগ্যতা ও কার্যক্রম
ফিনল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া বেশ সহজ। কারো সাহায্য ছাড়াই দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েব সাইটে গিয়ে আপনি নিজেই আবেদনপত্র পূরণ করতে পারবেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অবশ্য আপনাকে প্রস্তুতি নিতে হবে। সকল ডকুমেন্ট যোগাড় করতে হবে।
সাধারণত আবেদন প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করা হয় এবং আবেদনকারীদের নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আবেদনপত্র জমা দিতে হয়। ফিনল্যান্ডে ২০২৫ সালে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে ২ জানুয়ারি। যা চলবে প্রায় ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত। অপর সেমিস্টারের ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয় আগস্ট মাস থেকে যা সেপ্টেম্বরে শেষ হয়। কিন্তু সবচাইতে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয় জানুয়ারি সেশনে। তাই এটিকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়।
আবেদন করতে যেই ডকুমেন্টসগুলো প্রয়োজন
আবেদনপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যেমন শিক্ষাগত সনদপত্র, পাসপোর্টের কপি, ভাষা দক্ষতার প্রমাণ ইত্যাদি জমা দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য আপনার এসএসসি বা সমমান, এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষাগুলোর সার্টিফিকেট ও মার্কশিট মাইগভ ওয়েব সাইটে ঢুকে সত্যায়িত করে নিতে হবে। আপনি ঢাকা, যশোর বা অন্য যে কোন শিক্ষা বোর্ড থেকেই পাশ করুন না কেনো। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের বিদেশে গমণের সুবিধার্থে এই একটি অ্যাপস থেকে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সার্টিফিকেট ও মার্কশিট সত্যায়িত করতে পারবেন।
এ ছাড়াও আপনার নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত মার্কসিটের ট্রান্সক্রিপ্ট গ্রহণ করে তা সত্যায়িত করা এবং সার্টিফিকেটগুলো সত্যায়িত করতে হবে। প্রক্রিয়াটি বেশ সময় সাপেক্ষ। একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একেকভাবে কাজটি হয়ে থাকে।
যদি আপনি স্পাউস নিয়ে ফিনল্যান্ডে যেতে চান, তাহলে বুদ্ধিমানের কাজ হবে স্পাউসের সকল সার্টিফিকেট একইভাবে সত্যায়িত করে নেয়। যদিও ভর্তির আবেদনে তার কোন ভূমিকা থাকবে না।
আপনি ফিনল্যান্ডের কোন রিসার্চ বেজড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে অবশ্যই ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে টোফেল, পিটিআই বা আইইএলটিএস স্কোরের সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়। অনলাইন কপি গ্রহণযোগ্য হবে না। আইইএলটিএস এর ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ৬.৫ বা ৬ ব্যান্ড স্কোর চাওয়া হয়। অন্যদিকে এপ্লাইড বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অবেদনের ক্ষেত্রে অনেক স্থানেই আইইএলটিএস ছাড়াই আপনি ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। যদিও বুদ্ধিমানের কাজ হবে মিনিমাম ৬.৫ স্কোর নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করা।
রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাবজেক্ট অনুসারে কিছু বিশেষ অভিজ্ঞতা বা কোর্সের কথা উল্লেখ থাকে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন সাবজেক্টে আবেদনের পূর্বেই তা ভালো মতো যাচাই করে নিন। অন্যথায় আপনাদের ভর্তির আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।
ফিনল্যান্ডে পিএইচডি
গবেষণার জন্য দুর্দান্ত একটি স্থান ফিনল্যান্ড। কিন্তু দেশটিতে সরাসরি পিএইচডির অফার পেয়ে যাওয়া বেশ কঠিন। আপনাকে পিএইচডির সুপারভাইজান ও ফান্ডের ব্যবস্থা করেই সেখানে যেতে হয়। এ ক্ষেত্রে আপনি নিজ খরচে পিএইচডি করতে চাইলে বছরের যে কোন সময় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের একজন সুপারভাইজারকে বাছাই করে তার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে বা অন্য কোন ফান্ডে পিএইচডি করাটা বেশ কঠিন। কিন্তু এই কাজটিই বেশ সহজ হয়ে যাবে, যদি দেশটিতে আপনি মাস্টার্স করেন। সে ক্ষেত্রে পিএইচডি করার জন্য মাসে মাসে বেশ ভালো অঙ্গের ফান্ডও পেয়ে যাবেন আপনি।
চাকরি ও অন্যান্য সুবিধা-অসুবিধা
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতই অর্থনৈতিকভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে ফিনল্যান্ডে। আর এ কারণেই শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্বে যেই নিয়মিত স্কলারশিপের ব্যবস্থা ছিলো তা বর্তমানে নেই। কিন্তু ভর্তির জন্য বাছাই করা হলে দ্রুততম সময়ে রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রথম বছরের সেমিস্টার ফি প্রদানে ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ‘আর্লিবার্ড ছাড়’ প্রদান করে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু দেশটিতে গিয়ে আয় করে শিক্ষা ব্যয় প্রদানের কথা না ভাবাই ভালো। বরং অনার্সের ক্ষেত্রে চার বছরের পড়ালেখার খরচ এবং মাস্টার্সের ক্ষেত্রেও সম্পূর্ণ পড়ালেখার খরচ সঙ্গে নিয়েই যাওয়া উচিত।
দেশটিতে চাকরির বাজার বেশ মন্দা। এর পাশাপাশি বাংলাদেশিদের নিয়ে সেখানকার আফ্রিকান ও ভারতীয় কমিউনিটি নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমন অবস্থায় কমপক্ষে ৬ মাসের জীবনযাপনের খরচও সঙ্গে নিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
কত খরচ হতে পারে?
ফিনল্যান্ডে ৪ জনের একটি পরিবার বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ১৫০০-১৯০০ ইউরোর মধ্যে মাস পার করতে পারে। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও বাস্তবতা যে, দেশটিতে গিয়ে এই পরিমাণে অর্থ আয় করাটাও বেশ কঠিন। নিউ ইয়র্ক বা লন্ডনের মতো এখানে ট্যাক্সি চালিয়ে আয় করা যায় না। অধিকাংশ নাগরিক ব্যক্তিগত গাড়ি বা সরকারি ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাপন ব্যবহার করছেন।
পড়ালেখার নিশ্চয়তা ও দেশটিতে প্রাথমিক অবস্থায় চাকরি ছাড়াও টিকে থাকার লড়াইয়ে একটি পরিবারকে কমপক্ষে ৪০-৫০ লাখ টাকা সঙ্গে রেখে যেতে হবে মাস্টার্সের জন্য। অন্যদিকে একক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে মাস্টার্সের জন্য কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত।
কিন্তু অনার্সে ৪ বছরের কোর্সের ক্ষেত্রে খরচের হিসেবটা আরও বেশি।
এত খরচ করে কেন ফিনল্যান্ডে পড়বেন?
শুরুতেই বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য চাকরি ও দেশটিতে নাগরিকত্বের জন্য অধিকাংশরা আগ্রহী। আর ফিনল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্টিফিকেট বিশ্ব জুড়ে সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য। এর পাশাপাশি দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত অবস্থায় বিশ্বের বড় বড় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবার সুযোগ তৈরি হয়, যা অন্য যে কোন দেশের তুলনায় অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য।
যেটি কোনভাবেই করা উচিত নয়
শুধু প্রথম সেমিস্টারের ফি প্রদান করে একেবারেই খালিহাতে কখনও ফিনল্যান্ডে যাবার কথা ভাববেন না। সম্প্রতি সময়ে অনেক বাংলাদেশিকে দেশটি থেকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের লেখাপড়া কার্যক্রম পরিচালনা না করার জন্য। তাই কোনভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া বাদ দিয়ে শুধু কাজের চিন্তা নিয়ে কেউ গেলে তার দেশটিতে না যাওয়াই উত্তম।