ডালিমের উপকারিতা
ডালিমের আদি বিস্তার ইরান ও ইরাক থেকে শুরু হয়। প্রাচীনকালেই এটি ককেশাস অঞ্চলে চাষ হতো এবং সেখান থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া, স্পেন, আজারবাইজান, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, চীন, মিশর, বার্মা সহ বিশ্বের অনেক দেশেই ডালিম পাওয়া যায়। এ কারণেই ডালিমকে বিশ্বজুড়ে পরিচিত এবং জনপ্রিয় ফল বলা হয়।
ডালিম পুষ্টিতে ভরপুর একটি ফল। এতে ভিটামিন, বিউটেলিক এসিড, আরসোলিক এসিড এবং কিছু অ্যালকালীয় উপাদান যেমন সিডোপেরেটাইরিন, পেপরেটাইরিনন, আইসোপেরেটাইরিন এবং মিথাইলপেরেটাইরিন রয়েছে। এই উপাদানগুলো ডালিমকে আয়ুর্বেদিক এবং ইউনানি চিকিৎসায় কার্যকরী করে তুলেছে। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হওয়ায় ডালিমকে আয়ুর্বেদে "হৃদয়ের জন্য উপকারী ফল" হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ডালিমের ঔষধি গুণাবলী
রক্তস্রাব বন্ধ করা: ডালিমের ফুল রক্তস্রাব বন্ধে কার্যকর। দুর্ঘটনায় শরীর কেটে গেলে ক্ষতস্থানে ডালিমের ফুল বা পাতা চূর্ণ করে লাগালে রক্তপাত বন্ধ হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ডালিমে থাকা প্রাকৃতিক ইনসুলিন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
আমাশয় নিরাময়: ডালিমের কাঁচা বা শুকনো খোসা আমাশয়ের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। খোসা সিদ্ধ করে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
কৃমিনাশক: ডালিম গাছের শিকড় থেকে তৈরি গুঁড়া মধুর সাথে খাওয়ালে কৃমি সমস্যা দূর হয়।
নাক দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করা: ডালিম ফুলের রস শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে নাক দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
ডালিমের পুষ্টিগুণ
ডালিমের বৈজ্ঞানিক নাম *Punica granatum*, এবং এটি ইংরেজিতে *Pomegranate* নামে পরিচিত। বিভিন্ন ভাষায় একে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয়। লাল রঙের এই ফল দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি এর স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য এটিকে "সুপারফুড" বলা হয়।
ডালিমের বিশেষ রেসিপি:
ডালিম ক্ষীর
ডালিম খাওয়ার পাশাপাশি এটি দিয়ে সুস্বাদু ক্ষীর তৈরি করা যায়। ডালিমের ক্ষীর একটি চমৎকার ডেজার্ট যা স্বাদের পাশাপাশি পুষ্টিগুণেও ভরপুর।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
১. ডালিম – ৩টি
২. দুধ – আধা লিটার
৩. গুঁড়া দুধ – আধা কাপ
৪. কনডেন্সড মিল্ক – ১/৪ কাপ
৫. দারুচিনি গুঁড়া – আধা চা চামচ
৬. চেরি এবং বাদাম – প্রয়োজনমতো
প্রস্তুত প্রণালী:
১. ডালিমের দানা বের করে গ্রাইন্ডারে মিহি করে পেস্ট তৈরি করুন।
২. গুঁড়া দুধ সামান্য দুধে গুলে রাখুন।
৩. একটি সসপ্যানে দুধ ফুটিয়ে আঁচ কমিয়ে ক্রমাগত নাড়তে থাকুন।
৪. দুধ অর্ধেক হলে গুঁড়া দুধ মেশানো দুধ ঢেলে দিন এবং নেড়ে ঘন করুন।
৫. এরপর কনডেন্সড মিল্ক এবং ডালিমের পেস্ট মিশিয়ে আরও কিছুক্ষণ নাড়ুন।
৬. মিশ্রণ ঘন হয়ে এলে দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে নামিয়ে নিন।
৭. উপরে চেরি, ডালিমের দানা বা বাদাম দিয়ে পরিবেশন করুন।
ডালিমের এই মজাদার ক্ষীর আপনার খাবারের টেবিলকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে!