হিমালয়ের পাগলা মধু। যে মধু খেলে হয় হ্যালুসিনেশন
নেপালের বিস্তীর্ণ পর্বতমালায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে একটি বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর লোকজন বসবাস করে। বহু শতাব্দী ধরে হিমালয়ের ঢাল থেকে বিশেষ এক ধরনের মধু সংগ্রহ করে তারা। মাউন্ট এভারেস্টের ধৌলাগিরি ডিস্ট্রিক্টের পর্বত শ্রেণির প্রত্যন্ত গ্রামে তাদের বাস। বাড়ি-ঘরগুলো কাঠ বা পাথর দিয়ে তৈরি । লোকালয় থেকে দূরের এই আদিম এলাকায় শুধু যাওয়া যায় পায়ে হেঁটেই। পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো থেকে সেখানে যেতেও সময় লাগে বেশ কয়েকদিন।
মধু সংগ্রহ এখানকার অনেক মানুষেরই প্রাচীন ঐতিহ্য, যা বংশপরম্পরায় চলে এসেছে। প্রকৃতি ও মৌসুমের সঙ্গে সংস্কৃতির মেলবন্ধনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এটি। কিছু প্রাথমিক সরঞ্জাম ও কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই মধু সংগ্রহ করে এখানকার লোকজন। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
হিমালয়ের এ অঞ্চলটিতে অস্ত্র রাখা ও পরিবহন করা সম্পুর্ণ বেআইনি। কিন্তু বন্যপ্রাণীর কারণে কোনো সুরক্ষা ছাড়া কয়েক দিন ধরে বনে হাঁটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে এখানকার সংস্কৃতিকে বিপজ্জনক এবং পাগলাটেও বলা হয়। বাস্তুসংস্থান বদলে যাওয়ায় এই মধু সংগ্রহ এখন কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এই মধুর ক্রমবর্ধমান খ্যাতি ও চাহিদার কারণে এটি থাকে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। বিশেষ করে চীনা, জাপানি ও কোরিয়ান বাজারে এই মধুর চাহিদা অনেক বেশি। চাহিদা বেশি এবং মধু সংগ্রহের প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় এর দামও তুলনামূলকভাবে অনেক।
হিমালয়ের দুর্গম পাহাড়ি উপত্যকায় বাস করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মৌমাছির দল। একেক ঋতুতে একেক রকম মধু সংগ্রহ করে এসব মৌমাছি। অনেকটা লালচে দেখতে এই মধুই পরিচিত ‘পাগলা মধু’ নামে।
শুধু বসন্ত কালে রডোডেন্ড্রন নামের এক গাছের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এই মৌমাছি, এর মধুতে গ্রায়ানোটক্সিন নামক একধরনের যৌগ থাকে। গ্রায়ানোটক্সিন থাকা মধু খেলে হ্যালুসিনেশন হতে পারে। এই মধু মাত্র ২ চা-চামচ খেলেই হতে পারে গাঁজা সেবনের মতো অনুভূতি।
নেপালীদের কাছে এই মধু নিরামক হিসেবে পরিচিত, অ্যান্টিসেপটিক, কাশির সিরাপ ও ব্যথা উপশমকারী হিসেবেও এই মধুকে ব্যবহার করেন তারা।