Logo
Logo
×

জাতীয়

ইনু-মেননের রিমান্ড শুনানিতে চরম বিশৃঙ্খলা, সাবেক দুই মন্ত্রীকে এজলাসে মারধরের চেষ্টা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ১০:২০ পিএম

ইনু-মেননের রিমান্ড শুনানিতে চরম বিশৃঙ্খলা, সাবেক দুই মন্ত্রীকে এজলাসে মারধরের চেষ্টা

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের দুই নেতা হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননের রিমান্ড শুনানির দিনে চরম বিশৃঙ্খলা দেখল ঢাকার আদালত, এমনকি সাবেক এই দুই মন্ত্রীকে এজলাসের মধ্যেই মারধরের চেষ্টা হল।

মঙ্গলবার ঢাকার হাকিম আদালতে শুনানি চলাকালে মেনন ও ইনুকে লক্ষ্য করে অশ্লীল গালিগালাজের তুবড়ি ছোটালেন আইনজীবীরা। বিএনপিপন্থি কনিষ্ঠ আইনজীবীদের দুই পক্ষের মারামারিতে এজলাসে তৈরি হল বিভৎস পরিস্থিতি।

সোমবার গ্রেপ্তার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে এদিন আদালতে হাজির করে নিউ মার্কেট থাকার একটি হত্যা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম আলী হায়দার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

অন্যদিকে এক মামলায় পাঁচ দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে এদিন আরেক মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন মহানগর হাকিম সাইফুর রহমান।

প্রথমে রাশেদ খান মেননের এবং পরে হাসানুল হক ইনুর রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি চলে। মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ২৮ নম্বর এজলাসে এই শুনানির সময় চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে হাকিমরাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।

এজলাসে উপস্থিত আসামিপক্ষের আইনজীবী ও পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি দেখে হতভম্ভ হয়ে যান। বিএনপি সমর্থক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বার বার সবাইকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

ইনুর মামলার তদন্তকারী কর্তকর্তা নিউ মার্কেট থানার এসআই মো. মোরাদ খান এবং মেননের মামলায় প্রসিকিউশন পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান রিমান্ড আবেদন পড়ে শোনান।

পোষাককর্মী রুবেল হত্যার অভিযোগে আদাবর থানার মামলার শুনানিতে আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “ছাত্র জীবনে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এই রাশেদ খান মেনন। অথচ আজ তিনি অর্থ ও সম্পত্তির লোভে নিজেই স্বৈরাচারের দোসর হয়ে গেছেন। তিনি ১৪ দলের হয়ে শেখ হাসিনার সাথে মিটিং করে নির্দোষ কোমলমতি ছাত্রদের বুকে গুলি করিয়েছেন। তিনি এসব হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা।”

আর ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদকে হত্যার অভিযোগে নিউ মার্কেট থানার মামলার শুনানিতে ইনুর রিমান্ড আবেদনের পক্ষে ফারুকী বলেন, “এই সেই হাসানুল হক ইনু, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে যার দলের ২৮ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল আওয়ামী লীগ। অথচ তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে অশ্লীল কথা বলতেন সবসময়।

“ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার জন্য তিনি শেখ হাসিনাকে মদদ দিয়েছেন। দেশে লুটপাট, অন্য একটি দেশের কাছে সার্বভৌমত্ব বিক্রি করতে সহায়তা করেছেন। ছাত্রদের দেখামাত্র গুলির অন্যতম নির্দেশদাতা ও মদদদাতা তিনি। তিনি একজন নাস্তিক।”

ইনুর পক্ষে তার আইনজীবী মো. সেলিম রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন চাইলে ‘দালাল দালাল’ বলে চিৎকার করতে থাকেন বিএনপিপন্থি কনিষ্ঠ আইনজীবীরা।

এসময় বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং হেলমেট পরিহিত হাসানুল হক ইনুকে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মৃদু মৃদু হাসতে দেখা যায়।

বিকাল পৌনে ৫টার দিনে ইনু ও মেননকে বহনকারী গাড়িবহর আদালতে পৌঁছালে জনসন রোডে স্থানীয় লোকজন এবং আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত বিএনপিন্থি আইনজীবীরা ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করেন। তখনও তারা ‘নাস্তিক নাস্তিক’ বলে চিৎকার করছিলেন। কেউ কেউ ‘ইনুর ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

মেনন ও ইনুর শুনানি শেষে আদেশ দিয়ে বিচারক নেমে গেলে এলজাসের মধ্যেই বিএনপিপন্থি কনিষ্ঠ আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। দুই আইনজীবী অপর দুইজন আইনজীবীকে কিল ঘুষি দিতে দিতে একপর্যায়ে বসার বেঞ্চের উপর লাথি দিতে থাকেন।

এসময় এক পক্ষ এজলাস থেকে বের হয়ে যায়। পরে নিচে নেমে আদালত প্রাঙ্গণে দুই পক্ষ ধ্বস্তাধ্বস্তিতে জড়িয়ে পড়ে।

আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। একজন সেনা কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, “আপনারা এমন করলে কি করে হবে!”

বিএনপিপন্থি এক আইজবীবী তখন বলেন, “এগুলো স্বাভাবিক, এটা হবেই।”

তখন ওই সেনাকর্মকর্তা বলেন, “তাই বলে আইনজীবীদের মধ্যেও এগুলো হবে?” একথা বলে তিনি সরে যান।

সংঘর্ষে জড়ানো দুই পক্ষ বের হয়ে গেলে বিএনপিপন্থি অন্য আইনজীবীরা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা মেনন ও ইনুকে মারধরের চেষ্টা করেন। তবে আসামিদের ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সদস্যদের বাধায় তারা পৌঁছাতে পারেননি।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন