Logo
Logo
×

জাতীয়

বসুন্ধরার শাহ আলম ও আনভীরের অর্থপাচার খতিয়ে দেখবে সিআইডি

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩১ পিএম

বসুন্ধরার শাহ আলম ও আনভীরের অর্থপাচার খতিয়ে দেখবে সিআইডি

ছবি : সংগৃহীত

ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপের বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের (মানি লন্ডারিং) অভিযোগ অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিআইডি। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে সিআইডি। 

সংস্থাটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যায়, বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের প্রস্তাবিত জমির কিছু অংশ রাজউকের অনুমোদন থাকলেও অধিকাংশেরই অনুমোদন নেই। রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই ক্ষমতা ও অর্থের বলে জনসাধারণের ও সরকারি সম্পত্তি যেমন খাল, বিল, নদী, খাসজমি, পতিত ভূমি, কবরস্থান, বধ্যভূমি ইত্যাদি ভরাট করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

‘বসুন্ধরা রিভারভিউ’–এর ক্ষেত্রেও রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে জায়গা দখল ও ভরাটের কাজ করা হয়েছে। এরপর জনসাধারণ তথা সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্লট বিক্রয়ের মাধ্যমে অগ্রিম, এককালীন ও কিস্তির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।’

সিআইডি জানায়, ‘বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বিভিন্ন ব্লকে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া যায়, যার আনুমানিক মূল্য দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি। এসব জমি নিজেদের দখলে নিতে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয় বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সরকারের খাস, নালা, নদীসহ ৮০০ একর (২ হাজার ৪০০ বিঘা) এবং ভাওয়াল রাজ এস্টেটের ২১৬ একরসহ মোট ১ হাজার ১৬ একর জমি বেআইনিভাবে দখল করার অভিযোগ রয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে।’

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত জামানত না রেখে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকায় কেনা জমি; কাঠাপ্রতি ৩ কোটি টাকা দাম দেখিয়ে ৪২ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়েছে। এই ঋণের বেশির ভাগ অর্থ পাচার করা হয়েছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, লন্ডন, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। বসুন্ধরা গ্রুপের সিঙ্গাপুর অফিস দেখাশোনা করছেন আহমেদ আকবর সোবহানের বড় ছেলে সাদাত সোবহান তানভীর। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে একের পর এক প্রকল্প দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলেও সেসব ঋণ পরিশোধ না করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।’ 

সিআইডি জানায়, ‘এ ছাড়া বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাসের (কেরানীগঞ্জ, ঢাকা) বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের আশ্রয় নিয়ে বিদেশ থেকে আনুমানিক দুই হাজার কোটি টাকার বিটুমিন আমদানি করে এবং পরে সেই বিটুমিন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ইচ্ছেমতো দাম নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে।’

সিআইডির বিজ্ঞপ্তিতে সায়েম সোবহান আনভীরকে বাংলাদেশের স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের অন্যতম নিয়ন্ত্রক বলে উল্লেখ করা হয়। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে দেশে একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রায়ই স্বর্ণের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলার তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি, কর ফাঁকিসহ নানাভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারসংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মানি লন্ডারিং অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিআইডি।

এদিকে বসুন্ধরা গ্রুপ সম্পর্কে জানা গেছে, ‘বিগত সময়ে ঢাকার জেলা প্রশাসকের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জানা যায়, বসুন্ধরার দখলে বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের মধ্যে ৮০০ একর সরকারি খাসজমি এবং ২১৬ একর ভাওয়াল এস্টেটের জমি রয়েছে। এই সরকারি খাসজমি ও ভাওয়াল এস্টেটের জমি দখলের বিরুদ্ধে ভূমি সংস্কার কমিশন দেওয়ানি আদালতে চারটি মামলা হয়। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালও ৬টি মামলা দায়ের করেছে এবং উচ্চ আদালতেও ছিল ৭টি মামলা। কিন্তু বসুন্ধরা এসব মামলা, স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, ডিসির তদন্ত, রাজউক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা কোনো কিছুকেই পাত্তা না দিয়ে বহাল তবিয়তে ভূমি দখল ও প্রতারণার মাধ্যমে প্লট বিক্রি করে দেয়। এর মাধ্যমে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে গ্রুপটি। প্রায় এক লাখ কোটি টাকা কর ফাঁকি ও জালিয়াতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি অনুসন্ধান চলছে বসুন্ধরার বিরুদ্ধে। দুদক পরিচালক ফিরোজ মাহমুদের তত্ত্বাবধানে থাকা অনুসন্ধানটি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন শাহ আলম। এ ছাড়া দখল, জালিয়াতির মাধ্যমে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জমি জালিয়াতি করে ৫০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের আরেকটি অভিযোগ নিয়েও দুদকের অনুসন্ধান চলছে। কিন্তু সেটিরও কোনো গতি নেই।’  

বসুন্ধরার চেয়ারম্যান ও এমডির বিরুদ্ধে, ‘গত ২১ আগস্ট রাজধানীর বাড্ডা থানায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহ আলম ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে ৩টি হত্যা মামলা করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলি করে মানুষ হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে এসব মামলা হয়। এ ছাড়া গত ২৯ আগস্ট বগুড়ার আদালতে শাহ আলম ও আনভীরের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার দুটি মামলা হয়েছে। ২৮ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে শাহ আলম ও তার স্ত্রী আফরোজা বেগমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর শাহ আলম ও আনভীরের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মানহানির পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। তার আগে গত ২২ আগস্ট কর ফাঁকির অভিযোগে শাহ আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটি বিভিন্ন উপায়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী বসুন্ধরার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির বিশেষ অনুসন্ধান করেছে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)। এতকিছুর পরও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভূমিদস্যু শাহ আলম। অফিস করছেন নিয়মিত। এখন তিনি বিএনপি নেতাদের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে নতুন করে হামলা ও মামলা দেওয়ার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন