সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ৭১ লাখ টাকার চাল-গম উধাও
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭ পিএম
সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ৭১ লাখ টাকার চাল-গম উধাও
রংপুর সদর উপজেলা সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ১৪৪ মেট্রিক টন চাল ও ৯ হাজার ৫৪৪টি খালি বস্তাসহ গম আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। যার আনুমানিক মূল্য ৭০ লাখ ৯৩ হাজার ৫৬ টাকা। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। সিলগালা করা হয়েছে খাদ্যগুদামটি। একইসঙ্গে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) কানিজ ফাতেমার বিরুদ্ধে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরপরই গা ঢাকা দিয়েছেন খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা। মামলায় আসামি দেখানোসহ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অন্তরা মল্লিক।
এদিকে গত শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দায়ের করা ওই মামলায় কানিজ ফাতেমা ছাড়াও অন্য দুজন আসামি হলেন- গুদামের লেবার সর্দার রবিউল ইসলাম ও নিরাপত্তাপ্রহরী চঞ্চল সিং। বর্তমানে ওই গুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নুরুন নবী বাবুকে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও সদর এলএসডির একাধিক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, কানিজ ফাতেমা রংপুর সদর এলএসডি গুদামের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি কোটি টাকা মূল্যের চাল ও গম কালোবাজারে বিক্রি করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে তিনি ও খাদ্যগুদামের অন্য কর্মকর্তারা ধামাচাপা দিয়ে আসছিলেন। সরকারি খাদ্যগুদামের চাল ও গম লোপাট করার ঘটনা বেশ কিছুদিন ধরে কানাঘুষা চলে এলেও ওসি এলএসডি হিসেবে কানিজ ফাতেমা বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে ধামাচাপা দিয়ে আসছিলেন।
এদিকে সদর উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা হিসেবে কানিজ ফাতেমাকে কুড়িগ্রামে বদলি করা হয়। কিন্তু বদলির আদেশ পাওয়ার পরও কানিজ ফাতেমা তার দায়িত্ব হস্তান্তরে গড়িমসি শুরু করলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অন্তরা মল্লিকের সন্দেহ হয়।
সূত্র আরও জানায়, গেল আগস্ট মাসের শেষের দিকে ওই গুদামের স্টকের গরমিল পান সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিখিল চন্দ্র বর্মণ। পরে তিনি বিষয়টি জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক অন্তরা মল্লিককে অবগত করেন। সেখান থেকে গত ১ সেপ্টেম্বর গংগাচড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রইচ উদ্দিনকে আহ্বায়ক এবং পীরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অমূল্য কুমার সরকারকে সদস্যসচিব করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য তিন সদস্য হলেন- জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক (কারিগরি) রিয়াজুল ইসলাম, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক মো. তোজাম্মেল হোসেন ও পীরগঞ্জ ভেন্ডাবাড়ী সরকারি খাদ্যগুদামের খাদ্য পরিদর্শক মাজেদুল ইসলাম।
তদন্ত কমিটি গুদামের মজুতসহ সার্বিক বিষয় তদন্ত করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ চাল ও গমের মজুত কম পান। তারা পুরো বিষয়টি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে জানিয়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সদর খাদ্যগুদামের খাদ্য মজুতের পরিমাণসহ সার্বিক বিষয় তদারকের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য দাবি জানিয়ে লিখিতভাবে জানান। কিন্তু জেলা প্রশাসনে ম্যাজিস্ট্রেট সংকট থাকায় আবারও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তদন্ত কমিটিকেই মজুতসহ সার্বিক বিষয় তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়।
কমিটির সদস্যরা নিবিড়ভাবে তদন্ত করে গুদামের ১৪৪ মেট্রিক টন ৭৪৪ কেজি চাল, ৩০৭ কেজি গম ও ৫০ কেজির খালি বস্তা ৭ হাজার ৫০৯টি এবং ৩০ কেজির খালি ছোট বস্তা ২ হাজার ৩৫ টির হদিস পাননি। এ কারণে কমিটির সদস্যরা গত ১০ সেপ্টেম্বর গুদামটি সিলগালা করে দেন। এর পরদিন ১১ সেপ্টেম্বর তারা তদন্ত প্রতিবেদন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে গত বৃহস্পতিবার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জহিরুল ইসলাম গুদাম কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
খাদ্যগুদাম সূত্রে জানা গেছে, ১৪৪ মেট্রিকটন ৭৪৪ কেজি চালের সরকারি বাজার মূল্য (৪৫ টাকা কেজি দরে) ৬৫ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ টাকা, ৩০৭ কেজি গমের মূল্য (৩৩ টাকা কেজি দরে) ১০ হাজার ১৩১ টাকা। এ ছাড়াও ৫০ কেজির খালি বস্তা ৭ হাজার ৫০৯ টির বাজার মূল্য (প্রতি বস্তা ৬৫ টাকা দরে) ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫ টাকা এবং ৩০ কেজির খালি ছোট বস্তা ২ হাজার ৩৫ টির বাজার মূল্য (প্রতি বস্তা ৪০ টাকা দরে) ৮১ হাজার ৪০০ টাকা। এতে দেখা যায়, গুদাম থেকে ৭০ লাখ ৯৩ হাজার ৫৬ টাকার মালামাল আত্মসাৎ করা হয়েছে।