Logo
Logo
×

জাতীয়

অনন্য উচ্চতায় সম্পর্ক

Icon

মোরছালীন বাবলা, নিউইয়র্ক থেকে

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১০ এএম

অনন্য উচ্চতায় সম্পর্ক

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুরে দ্বিপক্ষীয় আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূকে জড়িয়ে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি : বাসস

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গতকাল মঙ্গলবার নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় গতকাল রাত ৯টা) জাতিসংঘের সদর দপ্তরের নির্ধারিত সভাকক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের বিরতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সরকার প্রধানের এটিই প্রথম বৈঠক। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাল।

এ প্রসঙ্গে গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে ড. ইউনূস বিগত সরকারের আমলে সংঘটিত সকল ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশ পুনর্গঠনে শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথাও জো বাইডেনকে জানান। অধ্যাপক ড. ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, দেশ পুনর্গঠনে তার সরকারকে অবশ্যই সফল হতে হবে। 

এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যেকোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি দেশের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তাহলে তাদেরও (যুক্তরাষ্ট্র সরকার) পূর্ণ সহযোগিতা করা উচিত। 

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই অভ্যুত্থান চলার সময় ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতির ছবি-সংবলিত ‘দ্য আর্ট অব ট্রাম্প’ শীর্ষক আর্টবুক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উপহার দেন।

নিউইয়র্কে ব্যস্ত সময় ড. ইউনূসের 

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক পৌঁছেই ব্যস্ত সময় পার করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত সোমবার নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় রাত ১০টা ১০ মিনিটে জে এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল থেকেই কর্মব্যস্ততা শুরু হয় তার। উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগদানের পাশাপাশি গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে পৃথক আলোচনাও করেন তিনি। এ ছাড়াও ছয়টি অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, এই সফরে বেশ কয়েকজন সরকারপ্রধান ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রধানের সঙ্গেও উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। বাংলাদেশের জাতিসংঘ স্থায়ী মিশনের একজন কূটনীতিক জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যেদিন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতা দেন, ওইদিন বিকালে তিনি সেই অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে সংবর্ধনার আয়োজন করেন। এই অধিবেশনের ফাঁকে কোনো দেশের শীর্ষ নেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দ্বিপক্ষীয় সাক্ষাতের ঘটনা বিরল।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের কর্মকর্তা অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর আহ্বান

এদিকে ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে জাতিসংঘ। চলতি বছর বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের ৫০ বছর উদযাপন করছেÑ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এ সফর করছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিষয়টি উল্লেখ করে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে শেয়ার করা ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুইন লুইস এক বার্তায় বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ায় আমরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পরপরই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়া গতকাল নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন ড. ইউনূস। এরপর রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে যোগ দেন তিনি। এখানে বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার দিনের সর্বশেষ সূচিতে ছিল জাতিসংঘের একটি মিলনায়তনে ‘জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য হওয়ার ৫০ বছর পূর্তি’ অনুষ্ঠানে যোগদান। অনুষ্ঠানে আগত বিশ্বনেতাদের স্বাগত জানান তিনি। এখানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় গত ৫ দশকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে এবং বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের অবদানের প্রসঙ্গসহ সামনের দিনগুলোতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর আহ্বান জানান ড. ইউনূস।

যা রয়েছে আজ ও আগামীকালের কর্মসূচিতে

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধান উপদেষ্টার নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ওইদিন স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে জাতিসংঘ সচিবালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন তিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং কুয়েতের যুবরাজ শেখ সাবাহ খালেদ আল-হামাদ আল-সাবাহর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টা আজ বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শেহবাজ শরিফ ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা এবং আগামীকাল ২৬ সেপ্টেম্বর নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। এই দিনই তিনি সফরসঙ্গীদের নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা করবেন বলে জানা গেছে। 

এর আগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এসে পৌঁছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী কাতার এয়ারওয়েজের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট গতকাল নিউইয়র্ক সময় রাত ১০টা ১০ মিনিটে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ডিএম সালাউদ্দিন মাহমুদ বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টাকে অভ্যর্থনা জানান। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী কাতার এয়ারওয়েজের বাণিজ্যিক ফ্লাইটটি সোমবার ঢাকার স্থানীয় সময় ভোর ৫টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে যাত্রা করে। 

এ সফর ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বের জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বদানের ঘটনা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। 

বাংলাদেশে সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে নিউইয়র্কে বৈঠকও করেছেন।

কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক 

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে দেখা করেন। গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এই সংক্ষিপ্ত বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশ-কানাডার সম্পর্ককে সুদৃঢ় ও স্বাধীনতাকে গভীরতর করা, প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশের তরুণদের সমর্থন করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। প্রধান উপদেষ্টা কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে ‘দ্য আর্ট অব ট্রাম্প’ শীর্ষক একটি আর্টবুক ‍উপহার দেন। 

ট্রুডো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অধ্যাপক ইউনূসের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠান নির্মাণে সহায়তা করার ক্ষেত্রে কানাডার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। 

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিগত শাসনকালে কীভাবে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে, তা বর্ণনা করেন। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কানাডা সরকারের সমর্থনের জন্য কানাডার প্রশংসা করেন। তিনি কানাডাকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আরও ভিসা দেওয়ার অনুরোধও জানান। 

প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের দেওয়া সংবর্ধনার মাধ্যমে তার জাতিসংঘ সফর শুরু করেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বিশিষ্ট বিশ্বনেতাদের সঙ্গে দেখা করেন।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন