Logo
Logo
×

জাতীয়

কমিটি বাণিজ্যে তৎপর বিএনপির নেতা খালেক, তৃণমূলে ক্ষোভ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১৫ পিএম

কমিটি বাণিজ্যে তৎপর বিএনপির নেতা খালেক, তৃণমূলে ক্ষোভ

কমিটি বাণিজ্যে তৎপর বিএনপির নেতা খালেক, তৃণমূলে ক্ষোভ

বিএনপি’র রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা। আর্থিক সুবিধা নিয়ে দলছুট, মাদকাসক্ত, নিষ্ক্রিয় এবং আওয়ামী ঘনিষ্ঠ লোকজনদের নিয়ে তিনি বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠনে বিধি বহির্ভূত হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে কেউ কেউ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এমন একাধিক অভিযোগের কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

বিএনপি নেতা আব্দুল খালেক রংপুর বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কুড়িগ্রাম-৩ আসনে (উলিপুর) বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তার বিরুদ্ধে বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এসব অভিযোগে বিভাগীয় এই নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও কুশপুত্তলিকা জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

বিভাগীয় নেতা খালেকের বিরুদ্ধে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা ও গাইবান্ধা জেলা জিয়া পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান সিদ্দিক মুসা।

অভিযোগপত্রে মুসা দাবি করেছেন, গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কমিটি দেওয়ার বিনিময়ে বিএনপি নেতা আব্দুল খালেক তার কাছে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। যার বিকাশ পেমেন্ট স্টেটমেন্ট আবেদনের সাথে সংযুক্ত করেছেন সাবেক এই ছাত্রদল নেতা। এছাড়াও ওই উপজেলার আরও ৯/১০ জন নেতাকর্মীর কাছে খালেক ছয় লক্ষ টাকা গ্রহণ করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন মুসা। এসব টাকা বিএনপি নেতা খালেক তার নিজের সহ সবুজ নামে তার ভাগিনার বিকাশ নাম্বারে গ্রহণ করেছেন। আব্দুল খালেক জেলার প্রতিটি উপজেলায় পদ বাণিজ্যের জন্য সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে  মাহমুদুল হাসান সিদ্দিক মুসা বলেন, ‘ছয় মাসেরও বেশি সময় আগে আমি ওই অভিযোগপত্র দিয়েছি। কিন্তু কোনও ফিডব্যাক পাইনি। দল এ নিয়ে কোনও ব্যবস্থাও নেয়নি।’

সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা শাখাতেও নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের দলে ভেড়াতে আব্দুল খালেক তৎপর হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আর্থিক সুবিধা নিয়ে তিনি দলছুটদের দলে ভেড়াতে সচেষ্ট হয়েছেন বলে একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে।

সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা শাখা সভাপতি মো. আব্দুল গফুর সরকার বলেন, ‘ তিনি (খালেক) নিষ্ক্রিয়দের দলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন বলে জানতে পেরেছি। তবে তার অন্য কোনও নেতিবাচক ভূমিকা আমার নজরে আসেনি।’

খালেকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ কুড়িগ্রাম জেলায়। জেলায় কমিটি দেওয়ার বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ তুলছেন বঞ্চিতরা। শুধু তাই নয়, নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে দলের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নিষ্ক্রিয় ও সুবিধাবাদীদের দলের ঠাঁই দিচ্ছেন খালেক। তিনি দলকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত করছেন বলে অভিযোগ তৃণমূলের।

জেলা বিএনপির একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে জেলা কৃষক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি নিয়ে বাণিজ্য করেছেন আব্দুল খালেক। তিনি টাকার বিনিময়ে মাদকাসক্ত ও নিষ্ক্রিয় লোকজনকে কমিটিতে আশ্রয় দিয়েছেন। কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের অনেকে আওয়ামী সুবিধাভোগী যারা দলের সংকটকালীন সময়ে কোনও কর্মসূচিতে অংশ নেননি।

বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে সুযোগসন্ধানী, দলছুট, নেশাখোর ব্যক্তিদের নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই ভাবে চিলমারী উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতেও স্বজনপ্রীতি ও অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী দোসর ও দলছুটদের স্থান দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন উপজেলা কৃষকদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান। গত ১৪ নভেম্বর আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পরপরই তা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেন বঞ্চিতরা। এ সময় কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে আব্দুল খালেকের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়।

জেলা কৃষক দলের সাবেক আহ্বায়ক খলিলুর রহমান খলিল বলেন, ‘ গত সেপ্টেম্বর মাসে কুড়িগ্রাম জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটির নেতৃত্বে মাদকাসক্ত ও দলছুট লোকদের স্থান দেওয়া হয়েছে। মূলত টাকার বিনিময়ে এই পকেট কমিটি করা হয়েছে। এজন্য বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক ভাই দায়ী।’

জেলা বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ শুধু কৃষক দল নয়। সাম্প্রতিক সময়ে জেলা কমিটি বিলুপ্ত করার পর থেকে নতুন কমিটিতে নিজের পছন্দের লোকজনকে স্থান দিতে তৎপর হয়েছেন আব্দুল খালেক। কোনও ধরণের সাংগঠনিক অবস্থান না থাকলেও শুধুমাত্র কেন্দ্রে তদবির বাণিজ্য করে তিনি বিভিন্ন জেলায় কমিটি গঠনে হস্তক্ষেপ করছেন। দলছুট  ও নিষ্ক্রিয় লোকদের নিয়ে তিনি কমিটিতে স্থান দিচ্ছেন। তার অযাচিত হস্তক্ষেপে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জিভুত হচ্ছে। তার কর্মকান্ডে আমরা বিরক্ত।

জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুর রহমান রানা বলেন, কুড়িগ্রামের নিষ্ক্রিয় ও দলছুট নেতাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে খালেক পদ বানিজ্যে অভিযোগ রয়েছে। ফলে কুড়িগ্রাম জেলার রাজনীতিতে বিরুপ প্রভাব পড়েছে। তার এই কর্মকাণ্ড নিয়ে অভিযোগ কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছি।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন