‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আমি নেই’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:০৮ পিএম
দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের সময় হতাহতদের সহায়তায় গঠিত জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদকের পদ ছেড়েছেন সারজিস আলম।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এ সমন্বয়ক। দায়িত্বপালনে নিজের সততা অটুট রেখেছেন বলেও দাবি করেছেন সারজিস।
তিনি বলেছেন, এই ফাউন্ডেশন প্রথম আর্থিক সহযোগিতা শুরু করে ১ অক্টোবর, অফিস চালু হয় ১৫ অক্টোবর থেকে। আমি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি ২১ অক্টোবর। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২ মাস ১০ দিন আমি এ দায়িত্ব পালন করি। এরপর আমি দায়িত্ব থেকে সরে আসি। ফাইনালি আমার সাইনিং অথরিটি ৭ জানুয়ারি হস্তান্তর হয় এবং অফিশিয়ালি আমার দায়িত্ব শেষ করি। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাচাইকৃত (ভেরিফায়েড) ৮২৬ জন শহীদ পরিবারের মধ্যে ৬২৮ জনকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়। পাশাপাশি প্রায় ১১ হাজার ভেরিফায়েড আহতের মধ্যে প্রায় ২ হাজার আহতকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়।
তিনি বলেন, নিহতদের মধ্যে ১৯৮ জনের পরিবারের সহায়তা পাওয়া বাকি রয়েছে। তালিকা যাতে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
সারজিস আলম বলেন, যত দিন পর্যন্ত তিনি তাঁর সর্বোচ্চ সময় ফাউন্ডেশনে দিতে পেরেছেন, তত দিন তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। যখন মনে হয়েছে, এখন থেকে ফাউন্ডেশনে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া তাঁর জন্য সম্ভব হবে না, তখন তিনি দায়িত্ব থেকে সরে এসেছেন। তাঁর কাছে নিজের সীমাবদ্ধতা অ্যাড্রেস করা এবং সে অনুযায়ী দায়িত্ব গ্রহণ বা ত্যাগ করা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং এটাতে সৎ সাহস লাগে। তিনি চেষ্টা করেছেন তাঁর চেয়ারের দায়িত্বের সঙ্গে সৎ থাকতে।
এই দুই মাস ১০ দিনের দায়িত্ব পালনকালে ফাউন্ডেশন থেকে কোনো বেতন বা সম্মানী তিনি নেননি বলেও জানিয়েছেন সারজিস। ফাউন্ডেশনের কাজ এগিয়ে নিতে এখন কে কে দায়িত্বে থাকছেন সেই বিষয়টিও পোস্টে স্পষ্ট করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এই নেতা। তিনি বলেন, এখন থেকে এক্সিকিউটিভ কমিটি পুরো অফিসের সার্বিক বিষয় পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে ৷ চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) সেখানে অফিসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে ৷ মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বর্তমানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে ৷ গভর্নিং বডি ফাউন্ডেশনের পলিসি মেকিংয়ে কাজ করবে। যেখানে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাসহ ৪জন উপদেষ্টা রয়েছেন (স্বাস্থ্য, সমাজকল্যাণ, স্থানীয় সরকার, আইসিটি)৷ ‘সাধারণ সম্পাদক' নামে কোনো পদ এখন নেই।
আন্দোলনে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ এর জমজ ভাই স্নিগ্ধকে শুরুতে ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। পরে গেল অক্টোবরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দ্বিতীয় সভায় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আনা হয় সারজিসকে; এবং স্নিগ্ধকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ দেওয়া হয়।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কল সেন্টারে কর্মরত সাইদুর রহমান শাহিদ বলেন, সারজিস ভাই অনেক দিন ধরেই ফাউন্ডেশনের সাথে নেই। পোস্টে যা লিখেছেন ঠিক আছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত এ ফাউন্ডেশনের সভাপতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গত ১০ সেপ্টেম্বর গঠিত এ ফাউন্ডেশনে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই-অগাস্টের কোটা ও সরকার পতনের গণআন্দোলনে হতাহতদের পরিবারকে সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে সংগঠনটি কাজ করছে।