শেখ হাসিনার আয়নাঘরে আটক থাকতো শিশুরাও, দেয়া হতো না মায়ের দুধ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৪০ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের পর বাংলাদেশে ঘটে এক নাটকীয় রাজনৈতিক পরিবর্তন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারত চলে যান। তার প্রস্থান এবং সাবেক সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নানা অন্ধকার দিক প্রকাশ হতে থাকে। তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সাবেক সরকারের সময় গোপন কারাগারে শিশুদেরও আটক রাখা হতো এবং সেখানে শিশুরা মায়ের দুধ পান করতে পারত না।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, বাংলাদেশের গোপন আটক কেন্দ্রে বন্দি শত শত লোকের মধ্যে বেশ কয়েকটি শিশুও ছিল বলে জানিয়েছে বর্তমানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে জোরপূর্বক গুমের তদন্তকারী একটি কমিশন। মঙ্গলবার, এই কমিশন তার প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলেছে, অন্তত অর্ধডজন শিশু তাদের মায়েদের সঙ্গে মাসের পর মাস জেলের ভেতরে কাটিয়েছে। আটক রাখার সময় শিশুদের লিভারেজ হিসেবে ব্যবহার করা হত, মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে তাদের দুধ পান করতে দেওয়া হতো না।
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা ভারত চলে যান। তিনি বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইতোমধ্যেই হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে শত শত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং আরও শত শত মানুষকে বেআইনিভাবে অপহরণ ও গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
কমিশন বলেছে, নারীদের সন্তানসহ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনার বিশদ বিবরণ তাদের কাছে রয়েছে। যার মধ্যে সর্বশেষ এই ধরনের ঘটনা ঘটে ২০২৩ সালে। কমিশন এক গর্ভবতী নারীর ঘটনাও উল্লেখ করেছে, যাকে তার দুটি ছোট বাচ্চাসহ আটক রাখা হয়েছিল এবং তাকে মারধরও করা হয়েছিল।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী তদন্তকারীদের এমন একটি কক্ষ দেখিয়েছেন যেখানে তাকে শিশু অবস্থায় মায়ের সঙ্গে বন্দি রাখা হয়েছিল। এই আটক কেন্দ্রটি পরিচালনা করত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। কমিশনের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, তার মা আর কখনোই ফিরে আসেননি। অন্য একটি ঘটনায়, এক দম্পতি এবং তাদের শিশুকে আটক করা হয়েছিল এবং জিজ্ঞাসাবাদের সময় বাবাকে চাপ দেওয়ার জন্য শিশুটিকে মায়ের দুধ খাওয়ানো থেকে দূরে রাখা হয়েছিল।
হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন এসব ঘটনার কথা অস্বীকার করত। সাবেক সরকার দাবি করেছিল, নিখোঁজদের কয়েকজন ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছেন। কিন্তু কমিশন বলছে, প্রায় ২০০ বাংলাদেশি এখনও নিখোঁজ রয়েছেন, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অপহৃত হয়েছিলেন।
কমিটির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কিছু ভুক্তভোগী তাদের নির্যাতনকারী কর্মকর্তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে না পারলেও তাদের জবানবন্দির মাধ্যমে ওই বাহিনীকে চিহ্নিত করা যাবে যারা এই নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত। সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এমন ক্ষেত্রে আমরা কমান্ডারকে জবাবদিহি করার সুপারিশ করব। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পরিবারের ওপর বহুমুখী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে, যা গুরুতর মানসিক আঘাত থেকে শুরু করে আইনি এবং আর্থিক চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত।