Logo
Logo
×

জাতীয়

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে এরশাদ পুত্র এরিকের চিঠি, বিদিশার বিরুদ্ধে সম্পত্তি বেদখলের অভিযোগ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫৫ পিএম

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে এরশাদ পুত্র এরিকের চিঠি, বিদিশার বিরুদ্ধে সম্পত্তি বেদখলের অভিযোগ

ছবি : সংগৃহীত

ট্রাস্ট সংক্রান্ত অনিয়ম নিরসনে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সমাধান চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পুত্র শাহাতা জারাব এরিক। চিঠিতে তিনি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন।

চিঠি দেয়ার পরদিনই সংবাদ সম্মেলন ডেকে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি বেদখল হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্ট।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্যরা।

তারা বলছেন, জীবিত থাকা অবস্থায় এরশাদ ও তার গঠিত অধিভুক্ত ট্রাস্ট সম্পদে সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিককে কোনো অধিকার না দেয়া হলেও মৃত্যুর পর আইনি জটিলতার কারণে ট্রাস্টি বোর্ডে কব্জায় না নিতে পারলেও এর অধিকাংশ সম্পদ বর্তমানে দখলে রেখেছেন তিনি। বিদিশা সিদ্দিক হতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ট্রাস্টকে মুক্ত করতে প্রশাসনসহ জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকতে ও সহযোগিতার কামনা করেছে ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন— ট্রাস্টের সদস্য কাজী মো. মামুনুর রশিদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সদস্য হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর ও সদস্য খন্দকার মনিরুজ্জামান টিটু।

সংবাদ সম্মেলনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের সম্পত্তি জবরদখলের চেষ্টার অভিযোগ তুলে ট্রাস্টের সদস্য কাজী মো. মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা দুঃখের সঙ্গে জানাতে চাই, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এরশাদ পুত্র এরিকের খরচ বাবদ প্রতিমাসে বনানীস্থ কুয়েত মৈত্রী মার্কেটে একটি দোকান, গুলশান ও বনানীতে দুইটি ফ্ল্যাট থেকে প্রাপ্ত ভাড়া প্রায় তিন লাখ বিশ হাজার টাকা দেয়া হয়।

তিনি বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক এরিক এরশাদের ভরণ-পোষণের উসিলা দিয়ে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করে আসছেন আমাদের কাছে। বিদিশা সিদ্দিক এক প্রকার জিম্মি করে রেখেছেন এরিক এরশাদকে। ইতোপূর্বে এরিকের একটি অডিও বার্তা ও লিখিত পত্র আমরা শুনেছি এবং দেখেছি। ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি এরিকের সেই অডিও বার্তা সংবাদ সম্মেলনে শুনানোও হয়েছিল। পল্লীবন্ধু এরশাদ ও তার গঠিত অধিভুক্ত ট্রাস্ট সম্পদে সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিককে কোনো অধিকার দেননি।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল সম্পাদিত এক দলিলে ট্রাস্ট গঠন করে তার বিষয়-সম্পত্তির বড় অংশ সেখানে দান করেন এরশাদ। ট্রাস্টের লক্ষ্য-উদ্দেশে বলা হয়েছে, ছেলে শাহাতা জারাব এরিকের ভরণ-পোষণ ও জনহিতকর কাজে ব্যয় হবে সম্পত্তি থেকে অর্জিত আয়। ট্রাস্টের আয় ভোগ ও কর্মকাণ্ডে অংশীদার হতে পারবেন না বিদিশা। তিনি এমন দাবি করলে তা আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে না। কিন্তু এরশাদের মৃত্যুর ৪ মাস পরই পুত্র এরিককে খাওয়ানোর কথা বলে বারিধারা প্রেসিডেন্ট পার্কে ঢুকেন বিদিশা সিদ্দিক। ট্রাস্টের অসিয়ত না মেনেই নিকেতনে তার নিজস্ব ফ্ল্যাট থাকলে তিনি আর প্রেসিডেন্ট পার্ক থেকে বের হননি। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রেসিডেন্ট পার্কের পুরোনো সব কর্মচারীদের বিদায় করে দেন।

বারিধারা প্রেসিডেন্ট পার্কের ৭ হাজার ৪২ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও পার্কিং, গুলশানের ৯৬ নম্বর সড়কের ৪/বি বাড়ির ২ হাজার ৭১ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, বনানীতে আল নাহিয়ান ট্রাস্টের সংযুক্ত আরব আমিরাত মৈত্রী শপিং কমপ্লেক্সের এক হাজার ৬০ বর্গফুটের দোকান, রংপুরের 'পল্লীনিবাস', রংপুরের মিঠাপুকুরের 'পল্লীবন্ধু কোল্ড স্টোরেজ, ১৫ কোটি ৯ লাখ টাকার স্থায়ী ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়, শেয়ার এবং পাঁচটি গাড়ি ট্রাস্টে দান করেন এরশাদ। বাকি সম্পদ স্ত্রী রওশন এরশাদ এবং বড় ছেলে রাহগীর আল মাহী এরশাদ শাদকে দিয়ে গেছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

মামুনূর রশিদ বলেন, ২০২২ সালের ১৪ আগস্টের পর থেকে এরশাদের রেখে যাওয়া ব্যাংক থেকে আমরা কোনো অর্থ উত্তোলন করিনি। দুটি ব্যাংকে প্রায় তিন কোটি টাকা ইতোমধ্যে মূল টাকায় যোগ হয়েছে। এছাড়া অসিয়ত নামায় বিভিন্ন জনহিতকর কাজ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কথা বলা হলেও তা আমি নিজ অর্থায়নে করেছি। এরশাদের রেখে যাওয়া একটি টাকাও উত্তোলন করিনি। এরিকের ভরণ-পোষণের জন্য শুধুমাত্র একটি ব্যাংক থেকে কিছু লভ্যাংশ উত্তোলন করা হয়েছে। আমরা ব্যাংকে চিঠি দিয়ে লেনদেন বন্ধ রেখেছি। যাতে অবৈধভাবে কেউ অর্থ উত্তোলন করতে না পারে।

প্রেসিডেন্ট পার্ক দখলের মাধ্যমে এরশাদের রেখে যাওয়া অর্থের জন্য আমাদের একের পর এক বিদিশা সিদ্দিক ও তার কিছু সন্ত্রাসী বাহিনী হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে তিনি অপ্রাপ্ত বয়স্ক শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে দেখভালের নাম করে ট্রাস্টকৃত সম্পদে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও জোরপূর্বক বসবাস করছেন। এরপর থেকেই প্রেসিডেন্ট পার্কে শুরু হয়েছে অসামাজিক, অনৈতিক কর্মকাণ্ড। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সমাজের উঁচু তলার এক শ্রেণির ক্ষমতালোভী ব্যক্তিদের নিয়ে বিদিশা খুলে বসেন মদের জলসা। প্রেসিডেন্ট পার্কে প্রতি রাতেই চলে অনৈতিক ও অসামজিক কর্মকাণ্ড। কখনো কখনো এসব অপকর্মে জোরপূর্বক এরশাদ পুত্র এরিককেও জড়ানোর চেষ্টা করা হয়। এইসব আড্ডার ভিডিও ধারণ ও প্রকাশ করেন বিদিশা। ভিডিও ধারণের উদ্দেশ্য হচ্ছে তার অপকর্মে জড়িয়ে যাওয়া মানুষগুলো যেন কখনো তার বিপক্ষে অবস্থান নিতে না পারেন।

তিনি আরো বলেন, এসব ভিডিও দেখিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে থাকেন বিদিশা সিদ্দিক। কেউ তার কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করলে তাকে এসব ভিডিও দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে থাকেন তিনি। এরূপ পরিস্থিতি থেকে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ট্রাস্টকে মুক্ত করতে প্রশাসনসহ জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতা কর্মীদের সজাগ থাকতে ও সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

যার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ সেই বিদিশা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অভিযোগ করেছি। এরিক এরশাদও অভিযোগ করেছেন। উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়েছে। তাই তদন্তাধীন এ বিষয়ে আপাতত আমরা কোনো মন্তব্য করছি না। তবে এতোটুকু বলতে পারি আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে মামুনূর রশিদ বলেন, ট্রাস্টের পুনর্গঠনের স্বার্থে আমি ট্রাস্টের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। আমরা চাই এই হস্তক্ষেপ এবং জবরদখল বন্ধ হোক। ট্রাস্ট নিয়মমাফিক চলুক এবং পারিবারিকভাবে এর সুরাহা হোক।

গত মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) ট্রাস্ট সংক্রান্ত অনিয়ম নিরসনের জন্য প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ চেয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বরাবর শাহাতা জারাব এরিক এরশাদের নামে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আমার ভবিষ্যৎ জীবনযাপনের নিরাপত্তার জন্য আমার পিতা ‘হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ট্রাস্ট’ গঠন করেন, যার একমাত্র সুবিধাভোগী আমি।

চিঠিতে এরিক এরশাদ আরও উল্লেখ করেন, সম্প্রতি ১০ই জানুয়ারি জানতে পেরেছি যে, ট্রাস্টের অবৈধ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনপ্রশাসন বিভাগে আমার নিরাপত্তা এবং ট্রাস্টের নীতিমালা রক্ষার্থে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের জন্য একটি আবেদন দাখিল করেছেন। আপনাদের অবগতির জন্য জানাতে চাই যে, আমি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং কোনো ঝুঁকির মধ্যে নেই। ইতোমধ্যে আমি পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে পত্রের মাধ্যমে ট্রাস্টের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী মামুন ও বর্তমান অবৈধ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ট্রাস্ট সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছি।

উল্লেখ্য, ট্রাস্টের মেয়াদ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। ট্রাস্টের একমাত্র সুবিধাভোগী হওয়া সত্ত্বেও গত দুই বছর ধরে আমি ট্রাস্টের ব্যাংক হিসাব থেকে কোনো অর্থ উত্তোলন করতে পারিনি। বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কাজী মামুন ট্রাস্টের আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং সম্পদের সঠিক তথ্য প্রদান করেননি। এছাড়াও তিনি সাম্প্রতিককালে ধর্ষণসহ বিভিন্ন মামলায় আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পারি যে, কাজী মামুন শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীরকে অবৈধ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করেছেন, যা আমার জানা ছিল না এবং যথাযথ রেজুলেশন বা সদস্যদের মতামত গ্রহণ ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে।

বর্তমানে ট্রাস্টের নির্ভরযোগ্য আয়ের অভাবে আমি কেবল মাত্র দুটি অ্যাপার্টমেন্ট ও একটি দোকানের ভাড়ার ওপর নির্ভরশীল, যা আমার দৈনন্দিন খরচ মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে আমাকে নিয়মিতভাবে আমার মায়ের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিতে হচ্ছে। অথচ কাজী মামুন এবং ট্রাস্টের অন্যান্য সদস্যরা আমার মায়ের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক মন্তব্য ছড়িয়ে আমার ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করছেন এবং আমার মায়ের কাছ থেকে আমাকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন।

এরিক তার চিঠিতে আরও বলেন, এ পরিস্থিতিতে, আমার দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা এবং চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। যদি আমার শারীরিক বা মানসিক কোনো ক্ষতি হয়, তার সম্পূর্ণ দায়ভার কাজী মামুন ও সংশ্লিষ্ট ট্রাস্ট সদস্যদের ওপর বর্তাবে। আমি একাধিকবার কাজী মামুন এবং ফখর-উজ জামান জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা সবসময় সময়ক্ষেপণ ও তালবাহানা করছেন এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ট্রাস্টের হিসাব বুঝিয়ে দিচ্ছেন না।

এরিক লিখেছেন, ট্রাস্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং আমার ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় কাজী মামুনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ট্রাস্টের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান এবং ট্রাস্টের ব্যাংক হিসাব স্বাভাবিক করার জন্য আপনার সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
Email: [email protected]

অনুসরণ করুন