Logo
Logo
×

জাতীয়

কোটাবিরোধী আন্দোলনে স্থবির ঢাকা, দুর্ভোগ চরমে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৪, ০৬:৩৫ পিএম

কোটাবিরোধী আন্দোলনে স্থবির ঢাকা, দুর্ভোগ চরমে

কোটাবিরোধী আন্দোলনে স্থবির ঢাকা, দুর্ভোগ চরমে

কোটা বাতিলে এক দফা দাবি আদায়ে সরকারকে ৩ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে ৮ জুলাই বাংলা ব্লকেড প্রত্যাহার করেছিল কোটা আন্দোলনকারীরা। এরপর একদিনের বিরতি দিয়ে বুধবার (১০ জুলাই) অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে রাজপথে প্রকট হয়েছেন কোটা বিরোধীরা। তাদের সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে রাজধানী। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জনসাধারণ।

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সারাদেশে চালিয়ে যাচ্ছেন এ কর্মসূচি। এদিন সকাল ১০টা থেকে রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। চলমান আন্দোলন-অবরোধে উত্তাল সারাদেশ। চরম ভোগান্তির শিকার সাধারণ মানুষ।

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে এবং হাইকোর্টের রায়ের স্থিতাবস্থার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা বলেন, এ দাবি যতদিন আদায় না হবে ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চলবেই।

হাইকোর্টে কোটা পদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে দেয়া রায়ের ওপর একমাসের এক মাসের  স্থিতাবস্থা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্রটি বহাল থাকছে বলে জানান আইনজীবীরা। বুধবার দুপুরে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।  ফলে যা ছিল, তা-ই থাকবে। অর্থাৎ, কোটা বাতিল নিয়ে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল থাকছে।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবাদকারীরা চাইলে আদালতে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে ভিসিদেরও উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

শিক্ষার্থীদের মিছিল শাহবাগ মোড়ে আসার পর পুলিশের অনুরোধে ওই এলাকা ছেড়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন। বুধবার (১০ জুলাই) দুপুর ১২টার কিছু আগে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শাহবাগে মোড়ে এসে অবরোধ করলে পুলিশের অনুরোধে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থানকারীরা চলে যান। শিক্ষার্থীদের মিছিল আসার সময় জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান করছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় উভয়পক্ষকেই উত্তপ্ত স্লোগান দিতে দেখা যায়। এর আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে টিএসসি ঘুরে আসেন সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।

মুক্তিযোদ্ধা কোটা ইস্যুতে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের ওপর আপিল বিভাগের এক মাসের স্থিতাবস্থার মধ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুরে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে এ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা কলেজ শাখার সমন্বয়ক নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা স্থায়ী সমাধান চাই। কোটা নিয়ে বারবার টালবাহানা দেখতে চাই না। সব গ্রেডে অযৌক্তিক এবং বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটা ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাস করতে হবে। আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে চাই। দাবি মেনে নেওয়া না পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

কোটাবিরোধী আন্দোলনে স্থবির ঢাকা, দুর্ভোগ চরমে


শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় বুধবার কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকা। দুপুর ১২টার দিকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে যাতায়াত ব্যবস্থা। বাসসহ অন্য যানবাহন প্রধান সড়কগুলোয় আটকা পড়েছে। নগরজুড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। অনেকে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওয়ানা দিচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের অবরোধে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে রেললাইনের ওপর বসে পড়েছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তাদের অবরোধের কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রেল চলাচল বন্ধ। একই সঙ্গে রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। দুপুর ১টার দিকে কয়েকশ আন্দোলনকারী অবস্থান নেন কারওয়ান বাজার সংলগ্ন রেললাইনের ওপর। এসময় তারা রেললাইনের দুই পাশে কাঠের স্লিপার দিয়ে বসে পড়েন। এতে বেলা ১১টার পর কমলাপুরের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

এ ঘটনার পর পর সর্বাত্মক ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগ মোড়ে আসতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর পৌনে ১২টায় শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন তারা। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এর আগে সকাল ১০টায় তারা জড়ো হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল ও বিভাগ থেকে মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন। সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হলপাড়া-মুহসীন হল-ভিসি চত্বর-টিএসসি হয়ে শাহবাগে যান তারা। এরপর শাহবাগ মোড় অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ওই এলাকায় আটকা পড়ে অনেক যানবাহন। যাত্রীদের গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যেতে দেখা যায়।

গুলিস্তান জিরোপয়েন্ট মোড় ও পল্টন মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। গুলিস্তানের নুর হোসেন চত্বর দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ। শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টার পর থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন এই মোড়। গুলিস্তান মোড়ে শিক্ষার্থীরা চারপাশে বৃত্তাকার হয়ে বসে পড়েছেন। শিক্ষার্থীরা দখলে নিয়েছেন পল্টন মোড়ও। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শ্যামপুর, জুরাইন, পুরান ঢাকার লোকজন ঢাকার অন্য অংশের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য এই জিরোপয়েন্ট মোড় ব্যবহার করেন। কিন্তু চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দিক থেকে আসা গাড়িগুলোকে জিরোপয়েন্টের আশপাশের সড়কে থেমে থাকতে দেখা যায়।

রাজধানীর আরেক প্রান্ত আগারগাঁও মোড়ের চারটি রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে মিরপুর থেকে গাড়ি আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। শ্যামলী বা বিজয় সরণির দিকেও যাচ্ছে না কোনো গাড়ি। যে গাড়ি যেদিক থেকে এসেছে, সেদিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সময় মিরপুর ও গাবতলীর পথে চলাচলের সড়কটি দিয়েও যান চলাচল ব্যাহত হয়। জরুরি প্রয়োজনে হেঁটে ও গলিপথ ধরে রিকশায় যাতায়াত করছেন পথচারীরা।

এছাড়া রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীর রাস্তাও বন্ধ করে দেয় আন্দোলনকারীরা। এ কারণে অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। আবার অনেকে যানজটে দীর্ঘ সময় গাড়িতে বসে রয়েছেন আশেপাশের রাস্তায়। এনামুল হক নামে তাদেরই একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কাজের সময় এভাবে একটানা এক জায়গায় বসে আছি। বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। সকাল ১০টা থেকে এখনো যানজটে আটকে আছি। জানি না কখন রাস্তা ছাড়বে। এ রকম আর কত দিন চলবে?

দেশব্যাপী এ কোটাবিরোধী আন্দোলনে সজাগ দৃষ্টি রাখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাই ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পূর্বনির্ধারিত স্থানে, এমনবি মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সড়কে ব্যারিকেড প্রস্তুত রেখেছে পুলিশ। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত পুলিশ সদস্যরা।

ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, পুলিশ বুধবার সকাল থেকে সতর্ক রয়েছে । যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয়া আছে। মানুষ ও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন