ছবি : সংগৃহীত
পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারায় এসেছে, ‘আর আমি (আল্লাহ) তোমাদের অবশ্যই পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫৫)
বন্যা এমন একটি মুসিবত ও দুর্যোগ, যা মানুষকে আয়াতে উল্লিখিত সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও মুসিবতের সম্মুখীন করে। এই ক্ষয়ক্ষতি ও মুসিবত কাটিয়ে উঠতে অন্যদের উচিত বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা।
এবং এটি এই সময়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
আল্লাহর দয়ায় সিক্ত হতে এগিয়ে আসুন
আল্লাহ তাআলা সমগ্র সৃষ্টিকুলকে ভালোবাসেন, বিশেষত মানুষ তাঁর প্রিয় সৃষ্টি। তিনি চান মানুষ পরস্পরের প্রতি দয়ার্দ্র হোক। তারা একে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসুক, সাহায্য করুক।
হাদিসে এসেছে, ‘দয়ালুদের প্রতি দয়াময় আল্লাহ দয়া করেন। তুমি পৃথিবীর বাসিন্দাদের প্রতি দয়া করো, তাহলে আসমানের অধিপতি তোমার প্রতি দয়া করবেন।’ (মুজামুল-আওসাত, হাদিস : ১৩৮৪)
তাই বন্যার্ত মানবতার পাশে দাঁড়ানো এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ঈমানি দায়িত্ব। মানুষকে বিপদমুক্ত করুন বদৌলতে বিপদমুক্ত হোন
পৃথিবীতে যারা অন্যকে বিপদমুক্ত করবে, অন্যের জীবন রক্ষায় সাহায্য করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের বিপদমুক্ত করবেন।
নবীজি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়ার সমস্যা দূর করবে, আল্লাহ তার আখিরাতের সমস্যা দূর করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৯)
স্বয়ং আল্লাহ যার সাহায্যে এগিয়ে আসবেন, তার মতো সৌভাগ্যশীল আর কে আছেন?
আল্লাহর হেফাজতে থাকার সৌভাগ্য অর্জন করুন! বন্যাদুর্গত এলাকার লোকেরা খাবার, পানীয় ইত্যাদির পাশাপাশি বস্ত্রের অভাবে থাকবেন। এই সময়ে বস্ত্র দিয়ে যারা তাদের পাশে থাকবেন। তারা মহান আল্লাহর হেফাজতে থাকবেন। বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদানের ব্যাপারে নবীজি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে বস্ত্রদান করবে সে তত দিন পর্যন্ত আল্লাহর হেফাজতে থাকবে, যত দিন তার দেওয়া বস্ত্র ওই ব্যক্তির পরিধানে থাকবে।
’ (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব : ৩/১৫১)
অসহায় প্রতিবেশীর পাশে না দাঁড়ানো ব্যক্তি মুমিন নয়
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে পাশের কষ্টে জর্জরিত ব্যক্তিকে সাহায্য করে না, সৃষ্টিজীবের প্রতি যার অন্তরে দয়ার উদ্রেগ হয় না, সে প্রকৃত মুমিন নয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পরিতৃপ্ত হয় আর তার পার্শ্বেই প্রতিবেশী অনাহারে থাকে।’ (মিশকাত, হাদিস : ৪৯৯১)
বিষয়টি শুধু খাবারের সঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং যেকোনো সমস্যাই এর আওতাভুক্ত। কোনো ব্যক্তি অসুখবিসুখ, পেরেশানি-কষ্টে ডুবে আছে আর আপনার সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও চুপ আছেন; কিন্তু সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন না, তাহলে নবীজির কথামতো আপনি মুমিন না।
মায়াহীন ব্যক্তি আল্লাহর দয়া বঞ্চিত হয়
কিছু মানুষ এমন আছে, যাদের অন্তরের মধ্যে দয়া-মায়ার চিহ্ন পর্যন্ত নেই। কোনো মানুষ বা প্রাণীর কষ্ট তাদের কঠিন হৃদয়ে দয়ার ঝড় আনতে পারে না, অন্যের প্রতি অনুগ্রহ করার কোনো ইচ্ছা তাদের মধ্যে প্রকাশিত হয় না—এরা বড়ই হতভাগ্য। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘শুধু দুর্ভাগা থেকেই দয়া-অনুগ্রহ ছিনিয়ে নেওয়া হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯২৩)
ব্যক্তি অন্যের প্রতি দয়া না করে নিজেকেই দয়া বঞ্চিত করে। হাদিসে এসেছে, ‘নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তির প্রতি দয়া করেন না, যে মানুষের প্রতি দয়া করে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩১৯)
আসুন, সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই।