ইসরায়েলিদের তোপের মুখে বক্তব্য থামালেন নেতানিয়াহু
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২৬ পিএম
ইসরায়েলিদের তোপের মুখে বক্তব্য থামালেন নেতানিয়াহু
গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিয়ে প্রায় ক্ষোভ প্রকাশ করে থাকেন ইসরায়েলিরা। এমনকি এ হামলার মূল লক্ষ্য অর্জন নিয়েও নানা সময়ে নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত হন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এবার তিনি ইসরায়েলি আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়েছেন। এ সময় নিজের বক্তব্য থামাতেও বাধ্য হন নেতানিয়াহু।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতারের রাজধানী দোহায় গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গত বছরের ৭ অক্টোবরে হামলায় নিহতদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধে গিয়ে তোপের মুখে পড়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ সময় ইসরায়েলি বিক্ষোভকারীদের কারণে নিজের বক্তব্যও থামাতে বাধ্য হন তিনি।
অনুষ্ঠানের একটি লাইভ সম্প্রচারে দেখা গেছে, রোববার (১৭ অক্টোবর) অনুষ্ঠান চলাকালে ইসরায়েলিদের বিক্ষোভের কারণে মঞ্চে এক মিনিটের বেশি সময় ধরে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন নেতানিয়াহু। এ সময় কিছু লোক ‘শেম অন ইউ’ বলে স্লোগান দেন। নেতানিয়াহুর বক্তব্য শুরুর পর এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় বক্তব্য থামাতে বাধ্য হন তিনি।
এ সময় বিক্ষোভকারীদের একজন চিৎকার করে বলেন, আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে।
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, অনুষ্ঠানে প্রাথমিকভাবে শোকাহত পরিবারের সদস্যদের বক্তৃতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আশঙ্কা করা হচ্ছিল যে তারা সরকারের সমালোচনা করবে। কিন্তু বিক্ষোভের মুখে পরিবারের সদস্যদের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
এদিকে ইসরায়েলিদের তোপের মুখে পড়লেও গাজায় তাদের তাণ্ডব চলছে। আলজাজিরা জানিয়েছে, রোববার গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৫৩ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে উত্তর গাজায় অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। এলাকাটিতে ইসরায়েলি সেনারা অভিযান জোরদার ও গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে আরও দুজন সংবাদিক রয়েছেন। এ নিয়ে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ যুদ্ধে মোট ১৮২ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ নিয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪২ হাজার ৯২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার ৭৬৫ জন শিশু রয়েছেন। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন আরও প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজায় এক লাখ ৮৩৩ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া অধিকৃত পশ্চিত তীরে আরও ছয় হাজার ২৫০ জন আহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছর ধরে অব্যাহত ইসরায়েলি হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এ জন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে। জাতিসংঘের হিসাবমতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিশরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)।
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে
গাজাভিত্তিক জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘অবকাঠামোর যে পরিমাণ ক্ষতি করা হয়েছে, তা পাগলামির পর্যায়ে পড়ে; দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ভবনও নেই যেখানে ইসরায়েল হামলা চালায়নি।’