ইসরায়েলি নারী সেনাদের ভয়ে ঘুম হারাম হিজবুল্লাহর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রথম নারী সেনাদেরও নিয়োগ করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। গত বছরের অক্টোবর থেকে তীব্র সীমান্ত সংঘর্ষের পর, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরাইল। লেবানন ভূখণ্ডে ইসরাইলি সেনাদের যে সব ইউনিট কাজ করছে, প্রথমবারের মতো সেখানে নারী সেনার দল পাঠিয়েছে ইসরাইল।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষাবাহিনীর প্রকাশিত ভিডিওতে নারী সেনার দলকে সাঁজোয়া গাড়িতে দক্ষিণ লেবাননে ঢুকতে দেখা গিয়েছে। এরপর সামরিক সরঞ্জামের ব্যাগ কাঁধে, হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে একটি বাড়িতেও ঢুকতে দেখা গিয়েছে তাদের। পাশাপাশি, জঙ্গলের রাস্তাতেও মোতায়েন ছিলেন নারী যোদ্ধারা। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারশেন দক্ষিণ লেবানন।
তেহিলা নামের ২১ বছরের এক সেনা তরুণী ‘দ্য জেরুজালেম পোস্টকে বলেন, ‘আমরা হেঁটে লেবাননের এলাকায় ঢুকে তাদের চিহ্নিত করেছি। সেটা একটা রোমাঞ্চকর ব্যাপার ছিল। এটা কোনও গুপ্তচরবৃত্তি নয়। দলের সবাই হাতিয়ার নিয়ে গিয়েছিলাম। আইডিএফের ‘আইট’ ব্যাটালিয়নে কর্পোরাল পদে রয়েছেন তেহিলা।
২০ বছর বয়সী শেনি নামের আরেক কর্পোরাল পদধারী বলেন, ‘আমরা লেবাননের ভিতরে দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত ঢুকে যাই। আমাদের সৈনিকেরা যে এলাকাগুলোর এখনও খোঁজ পাননি, সেখানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। ‘আমরা ট্যাঙ্ক থেকে নির্গত আগুনের ছবি তুলেছিলাম। এরপর যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়েই সেগুলিকে বিশ্লেষণ করি। তখনই শত্রুদের গতিবিধি অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায়।’
শেনি আর জানিয়েছেন, অব্যাহত হামলার মুখে বর্তমানে শহর ছেড়ে হিজবুল্লার যোদ্ধারা লেবাননের গ্রামগুলোতে ঘাঁটি তৈরি করছে। এদিকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলছে, হিজবুল্লার ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্র লুকিয়ে রাখার জায়গা এবং তাদের একাধিক গুপ্ত আস্তানার সঠিক ঠিকানার খুঁজে পেয়েছে তাদের নারী দল। সেই মতো আক্রমণ চালাচ্ছে তারা।
তাদের আরো দাবি, স্কুল-হাসপাতালের পাশাপাশি বহু সাধারণ নাগরিকের বাড়িতে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে। ইসরাইলের আইন অনুযায়ী দেশের প্রতিটি নাগরিককে সেনা প্রশিক্ষণ নিতে হয়। সেনাবাহিনীতে চাকরিও এখানে বাধ্যতামূলক। যদিও এত দিন নারীদের সেনা রিজার্ভে রাখার প্রথা ছিল। এবার তাদের সরাসরি রণাঙ্গনে পাঠালো নেতানিয়াহু সরকার।
এদিকে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৩,৫৪৪ জন লেবানিজ নিহত এবং ১৫,০৩৬ জন আহত হয়েছেন। দক্ষিণ লেবানন অঞ্চলে ইসরাইলি বাহিনী এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে চলমান সংঘর্ষে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেসামরিক জনগণ এই হামলার প্রধান শিকার। যেখানে বসতবাড়ি, হাসপাতাল এবং মৌলিক পরিষেবাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এই সংঘাতের ফলে লেবাননের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে এবং মানবিক সহায়তার জন্য জরুরি আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সহিংসতা বন্ধ করতে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তবে ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করছে লেবাননের মানবাধিকার সংস্থাগুলো।