সাবেক মন্ত্রী টিউলিপের অর্থপাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু : দ্য টেলিগ্রাফ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৭ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড অর্থপাচারের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এই তদন্তে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি ও শেখ হাসিনার ভাতিজি টিউলিপ সিদ্দিকও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। খবরটি ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত হয়েছে।
দুদক রাশিয়া-অর্থায়িত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থ দিয়ে টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনে ৭ লাখ পাউন্ডের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন কি না তা তদন্ত করছে।
দুদকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এখন এই তদন্ত প্রকাশ্যে শুরু করা হয়েছে।
তদন্তকারীদের মতে, টিউলিপ সিদ্দিক অবৈধ ব্যাংক লেনদেন ও সম্পত্তি ক্রয়ের সঙ্গে জড়িত। অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ার অফশোর অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ পাচার করে লন্ডনে এই সম্পত্তি কেনা হয়েছে।
তারা আরও দাবি করছেন, মালয়েশিয়া হয়ে পাচারকৃত অর্থ ব্যবহার করে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মহলের জন্য আরও কয়েকটি সম্পত্তি কেনা হয়েছে, যার মধ্যে ৬.৫ লাখ পাউন্ডের একটি ফ্ল্যাট ও ১.৫৮ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি সম্পত্তি রয়েছে, যা টিউলিপ সিদ্দিকের পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে রয়েছে।
এই কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশের পর যুক্তরাজ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। গত মাসে লেবার পার্টির সিটি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন টিউলিপ সিদ্দিক।
এর আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের নৈতিক পরামর্শদাতা স্যার লরি ম্যাগনাস তদন্ত করে জানান, টিউলিপ সিদ্দিক অসাবধানতাবশত জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন।
তবে, লেবার পার্টির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অভিযোগের সঙ্গে প্রকল্পের সময়সীমা মেলানো যাচ্ছে না, কারণ বিতর্কিত সম্পত্তিটি ২০০৪ সালে কেনা হয়েছে, অথচ রূপপুর প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১৩ সালে।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই তার পরিবারের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। বর্তমানে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন এবং তার শাসনামলে দমন-পীড়ন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গ্রেপ্তার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও রয়েছে।
দুদকের এই তদন্ত শুধু রূপপুর প্রকল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তদন্তকারীরা বলছেন, শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন মেগা প্রকল্প থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
২০১৩ সালে মস্কো সফরে গিয়ে শেখ হাসিনা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করে রূপপুর প্রকল্পের জন্য ১০ বিলিয়ন পাউন্ড অর্থায়নের চুক্তি করেন। অভিযোগ রয়েছে, এই চুক্তির মধ্যস্থতায় ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি প্রকল্প থেকে ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ করে তা পাচারে সহযোগিতা করেছেন।
টিউলিপ সিদ্দিকের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই এবং এখন পর্যন্ত তাকে এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করা হয়নি। তিনি সব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করছেন।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই তদন্ত শেখ হাসিনার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।